সম্প্রতি জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে (আইএসপি) ক্যাশ সার্ভার অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয় বাংলাদেশ টেলিকমিনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি)। আর দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের এই ক্যাশ সার্ভার অপসারণ করা হলে গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্থ হবে মন্তব্য করেছেন ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক।
শনিবার (৩ জুলাই) বাংলাদেশ সিস্টেম এডমিনিস্ট্রেটরস ফোরাম (বিডিসাফ) আয়োজিত ‘এক দেশ এক রেট – কোন পথে বাংলাদেশের ইন্টারনেট’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।
এমদাদুল হক বলেন, সরকার নির্ধারিত সময়ের পর যদি ক্যাশ সার্ভার তুলে নেওয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশের ৫০ শতাংশ ট্রাফিক লস হবে। একদিকে ব্যবহারকারীর জন্য সাশ্রয়ী অন্যদিকে প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের খরচ বেড়ে যাবে।
আইএসপিএবি’র এই নেতা বলেন, আমি মনে করি সরকারের সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনা করা উচিত। অন্যথায় আইএসপিগুলো সফলভাবে সেবা দিতে ব্যর্থ হতে পারে। আমাদের অন্তত ছয় মাস থেকে এক বছর সময় দেওয়া উচিত, তাতে আমরা দেখব কোথায় নিরাপত্তা ব্যাঘাত হয়।
গাইডলাইন নিয়ে বিভ্রান্ত রয়েছে উল্লেখ করে এমদাদ বলেন, প্রান্তিক আইএসপি’র জন্য সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন এখনো আমরা নিতে পারিনি। প্রান্তিক পর্যায়ের ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কের প্রকল্পগুলো আলোর মুখ দেখছেনা। বিদেশি বিনিয়োগ আনার ব্যাপারে দেশি উদ্যোক্তাদের সাথে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। দেশেই অনেকেই বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।
এদিকে একই আয়োজন সংগঠনটির সভাপতি আমিনুল হক বলেন, প্রান্তিক আইএসপিগুলোকে বিভিন্ন সিলিং বা ফ্লোর প্রাইসে যাওয়া উচিত। ছোট ছোট স্ল্যাভে প্রাইস আনা যেতে পারে। এতে লেভেল প্লে ফিল্ড নিশ্চিত করা যাবে।
আলোচনা অনুষ্ঠানে এনটিটি লিমিটেডের সিনিয়র নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার ফকরুল আলম পাপ্পু বলেন, সারা বিশ্বেই ক্যাশ সার্ভার দিয়ে ইন্টারনেট সার্ভ হচ্ছে। ক্যাশ সার্ভার এক ধরণের একটা প্রক্সি সার্ভার। প্রান্তিক ব্যবহারকারীর যত কাছে ক্যাশ বা কন্টেন্ট সার্ভার রাখা যায় তত ভাল। ক্যাশ সার্ভার যদি সরিয়ে নেওয়া হয়, তাহলে সেবার মান বিঘ্নিত হবে, ল্যাটেন্সি বেড়ে যাবে। এতে অন্যান্য ইম্প্যাক্টের পাশাপাশি কস্টিং ইম্প্যাক্টও হবে। ক্যাশ সার্ভার তুলে নিলে ৫০% ব্যান্ডউইথ ব্যবহার বেড়ে যাবে যার ইমপ্যাক্ট অবশ্যই ইন্টারনেটের দামের উপর পড়বে। আর প্রান্তিক পর্যায়ের আইএসপিকে এই বেশি ব্যবহারের দাম তো তুলে আনতেই হবে।
বিডিসাফের যুগ্ম-আহবায়ক মোহিব্বুল মোক্তাদীর তানিমের সঞ্চালনায় এই আলোচনা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের (বিডিওএসএন) সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান বলেন, আইসিটি পলিসি হয়েছে, ব্রডব্যান্ড পলিসি হয়েছে। ২০১৫ সালের পর থেকে ব্রডব্যান্ড পলিসি আপডেট হচ্ছেনা। ৫০০ টাকায় ইন্টারনেট দেওয়ার জন্য কি ধরণের অবকাঠামো দরকার সেই নিকেশ করা দরকার। ক্যাশ সার্ভার ধরে অনেক প্রান্তিক জায়গায় নব্বই শতাংশ ইন্টারনেট সার্ভ করা যায়। ক্যাশ সার্ভার পলিসি(নীতিমালার) মাধ্যমে নিশ্চিত করা যেতে পারে কেননা লোকাল ট্রাফিক লোকাল রাখাই শ্রেয়। ইন্টারনেটের বিশাল জগত এখনো আমরা তুলে ধরতে পারিনি । এক দেশ এক রেট- ট্রান্সমিশনের সাথে সম্পর্কিত বিধায় ক্যাশিং সার্ভারের সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুনভাবে ভাবে দরকার।
এই আয়োজনে আরো বক্তব্য রাখেন, ফাইবার এট হোম সিটিও সুমন আহমেদ সাবির, বাংলাদেশ সিস্টেম এডমিনিস্ট্রেটর ফোরামের আহবায়ক জুবায়ের আলমাহমুদ হোসেন, বিকাশের হেড অফ আইটি গভর্নেন্স নাজমুল করিম। এসময় তারা ট্রান্সমিশন কস্ট, উন্নতমানের সেবা এবং আইএসপির এক দেশ এক রেট বাস্তবায়নের আগে আইআইজি ও এনটিটিএন এর দাম নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা করেন এবং বিটিআরসি কে ওভারহেড ক্যাবলের উপরে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরির দাবী জানান।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এক দেশ এক রেট ট্যারিফের মাধ্যমে বিটিআরসি সারা দেশের জন্য গ্রাহক পর্যায়ে ৫ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেটের মূল্য নির্ধারণ করেছে ৫০০ টাকা। এ ছাড়া ১০ এমবিপিএসের মূল্য ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং ২০ এমবিপিএসের মূল্য ১১১০ টাকা থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ঢাকার বাইরের ব্যবহারকারীরা ব্রডব্যান্ড সংযোগের জন্য এখন এর চেয়ে বহুগুণ খরচ করেন। সেদিক বিবেচনায় নতুন নির্ধারিত মূল্য তাদের জন্য সাশ্রয়ী। এমন উদ্যোগের ফলে তাদের ইন্টারনেট সংযোগের খরচ স্বাভাবিকভাবেই কমে আসবে। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, এর উদ্দেশ্য মহৎ। কিন্তু সমস্যা হলো, এটাকে কার্যকর করার জন্য আনুষঙ্গিক উপাদানগুলোর কথা বিটিআরসি ভেবেছে কিনা। ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর (আইএসপি) জন্য সেবা মূল্যের আওতায় ব্যান্ডউইথের দাম এবং ট্রান্সমিশন ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচও অন্তর্ভূক্ত। এই তিনটি বিষয়ের মধ্যে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তৃতীয় পক্ষের হাতে ছেড়ে দিয়ে খরচ কম-বেশি সমন্বয় করতে পারলেও দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিক বাদ থেকে যায়।