কানেক্টিভিটির স্বল্পতা থাকা দেশগুলোতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিতের মাধ্যমে দেশের জিডিপি ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব – এরিকসন-ইআইইউ’র নতুন প্রতিবেদন।
• ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) ‘কানেক্টিং লার্নার্স: ন্যারোয়িং দ্য এডুকেশনাল ডিভাইড’ শীর্ষক প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট খাতগুলোর অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে চারটি মূল বিষয়কে চিহ্নিত করা হয়েছে
• ‘গিগা’ উদ্যোগের মাধ্যমে স্কুল কানেক্টিভিটি ম্যাপিং প্রকল্পে শুরু থেকেই আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে এরিকসন; প্রতিষ্ঠানটি ইউনিসেফের বৈশ্বিক অংশীদার হিসেবে কাজ করছে
• স্কুল কানেক্টিভিটির মাধ্যমে শিশু-কিশোর ও কমিউনিটির ক্ষমতায়ন এবং মানসম্পন্ন ডিজিটাল শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে; পাশাপাশি, ব্যক্তিপর্যায়ে এবং আঞ্চলিক ও জাতীয়ভাবে অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে
এরিকসনের (নাসডাক: এরিক) সহায়তায় পরিচালিত ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট’র (ইআইইউ) একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, ব্রডব্যান্ড সংযোগের স্বল্পতা থাকা দেশগুলোর স্কুলগুলোকে ইন্টারনেটে সংযুক্ত করার মাধ্যমে ওই দেশগুলোর জিডিপি ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব।
বৈশ্বিক করোনা মহামারির ফলে বিশ্বব্যাপী শিক্ষাব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে; ১৯০টিরও বেশি দেশে বন্ধ রাখা হয়েছে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ সময়ে ঘরে ইন্টারনেট কানেক্টিভিটির মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে ১৬০ কোটি শিক্ষার্থীর মধ্যে কমপক্ষে ১০ কোটি শিক্ষার্থীর ঘরে বসে শিক্ষা গ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে। স্কুলগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ হওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রমে সহায়ক ভূমিকা রাখতে এখন স্কুলগুলো ইন্টারনেটে সংযুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি হয়েছে, যা শিক্ষা ও ডিজিটাল বৈষম্য দূর করতেও সহায়তা করবে।
একটি সুশিক্ষিত শ্রমশক্তির মাঝে উদ্ভাবনী ও সৃজনশীল ধারণা নিয়ে কাজ করবে, যা অর্থনৈতিক বিকাশ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক হবে। স্কুলে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ শিক্ষার্থীদের উন্নত শিক্ষা ও দক্ষতা অর্জনে সমান সুযোগ প্রাপ্তিতে সহায়তা করবে। এর মাধ্যমে নতুন ক্যারিয়ারের পথ ও মানসম্মত জীবনের দ্বার উন্মোচন হতে পারে যা ব্যক্তির পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে সমাজকেও উপকৃত করবে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম গ্লোবাল কম্পিটিটিভনেস সূচক (২০১৭) ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংক হিউম্যান ক্যাপিটাল সূচক (২০১৭) দু’টিতেই ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ ও শিক্ষার মানের পারস্পরিক সম্পর্ক স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইআইইউ’র বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, কোনও দেশে স্কুল কানেক্টিভিটি প্রতি ১০ শতাংশ বৃদ্ধির জন্য মাথাপিছু জিডিপি ১.১ শতাংশ বাড়তে পারে।
যদিও ২০০৫ সালের ১৭ শতাংশ থেকে কয়েক বছরে বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধির হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, তবুও এটি ২০২১ সালে মাত্র ৫০ শতাংশ ছাড়িয়েছে এবং পৃথিবীর সব অঞ্চলে এই বৃদ্ধির মাত্রা সমান নয়। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারের প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, সে দেশের ফিনিশ লেভেলে স্কুল কানেক্টিভিটি উন্নত করলে তাদের মাথাপিছু জিডিপি ২০ শতাংশ বৃদ্ধি হতে পারে – মাথাপিছু ৫৫০ মার্কিন ডলার থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে তা মাথাপিছু ৬৬০ মার্কিন ডলারে উন্নীত হতে পারে।
প্রতিবেদনে পরিবর্তনের জন্য চারটি পদক্ষেপের ওপর আলোকপাত করা হয়:
১। পারস্পরিক সহযোগিতাই চাবিকাঠি: স্কুলগুলোকে ইন্টারনেট সংযুক্ত করার বাঁধা অতিক্রম করতে সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি অংশীদারদের প্রচেষ্টার সামগ্রিক সমন্বয় প্রয়োজন, পাবলিক/বেসরকারী পার্টনারশীপের কৌশল প্রয়োজন।
২। ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি ও সাশ্রয়: ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ নিশ্চিত করার প্রথম ধাপ হলো অবকাঠামো নির্মাণ করা। পাশাপাশি, সংযোগের মান এবং খরচও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
৩। ইন্টারনেট এবং ডিজিটাল উপকরণসমূহ শিক্ষার মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত করা: স্কুলে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করা হলে, পরবর্তীতে, তা অবশ্যই পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। প্রতিদিনের শিক্ষা কার্যক্রমে প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে।
৪। শিশুদের অনলাইনে সুরক্ষা: স্কুলে ইন্টারনেট ব্যভারের সুযোগ শিশুদের জন্য অনেক সম্ভাবনা উন্মোচন করবে। তবে, এক্ষেত্রে তাদের সুষ্ঠু ও সুরক্ষিত অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নিরাপদ এবং সুরক্ষিত ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিত করতে অবশ্যই এর ব্যবহার সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হবে।
প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে যে, সকল বয়সের স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি একটি বৈশ্বিক বাস্তবাতায় রূপান্তরের মাধ্যমে ডিজিটাল বৈষম্য দূরীকরণে বিশ্বব্যাপী সরকারি, বেসরকারি ও এনজিও খাতের নেতৃবৃন্দের যৌথ প্রচেষ্টা নাটকীয় পরিবর্তন আনতে পারে।
এর ধারাবাহিকতায়, এরিকসন সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের আহ্বান জানাচ্ছে ইউনিসেফ ও ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত স্কুল কানেক্টিভিটি বিষয়ক উদ্যোগ গিগা কার্যক্রমে সহায়তা প্রদানের জন্য। সংশ্লিষ্ট অংশীদাররা আর্থিক অনুদান, তথ্য প্রদান, প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও কানেক্টিভিটির জন্য টেকসই ব্যবসায়িক মডেল তৈরি এই কার্যক্রমগুলোর মাধ্যমে এ উদ্যোগে যুক্ত হয়তে পারেন। ৩৫টি দেশের স্কুল কানেক্টিভিটির অসমতা চিহ্নিতে ইউনিসেফের সাথে তিন বছরের অংশীদারিত্বের মাধ্যমে এরিকসন এক্ষেত্রে এর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এরিকসনের সহায়তায় করা ইআইইউ’র ‘কানেক্টিং লার্নার্স: ন্যারোয়িং দ্য এডুকেশনাল ডিভাইড’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি ২০৩০ সালের মধ্যে সকল স্কুল ও এর আশেপাশের কমিউনিটিগুলোকে ইন্টারনেট সংযোগের আওতাভুক্ত করতে গিগার লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে এরিকসনের ভূমিকাকে আরও দৃঢ় করেছে।
এরিকসনের সাসটেইনেবিলিটি ও করপোরেট রেসপন্সিবিলিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট হেদার জনসন বলেন, “যখন গিগা উদ্যোগের ব্যাপারে ঘোষণা করা হয়, তখনই আমরা তাৎক্ষণিকভাবে এর ইতবাচক প্রভাব সম্পর্কে বুঝতে পেরেছিলাম। এ উদ্যোগ সারা বিশ্বের শিশুদের জন্য উজ্জ্বল ও সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের জন্য বিভিন্ন দেশের মধ্যকার ডিজিটাল বৈষম্য কমিয়ে আনতে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে।”
তিনি আরও বলেন, “প্রতিবেদনের মাধ্যমে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, ব্যবসায়িক, সরকারি ও এনজিও খাতের নেতৃবৃন্দের মধ্যে অংশীদারিত্ব বিষয়ের সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে এবং মানুষকের জীবনকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে। যত বড় বা ছোটই হোক না কেন, খাতসংশ্লিষ্ট প্রত্যেক অংশীদারই এক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে ভূমিকা রাখতে পারে। তাই, আমরা প্রত্যেক অংশীজনকেই প্রতিবেদনটি পড়ার জন্য উৎসাহিত করছি এবং এর গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য অনুধাবন করে গিগা উদ্যোগে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করছি।’
ইউনিসেফের পার্টনারশিপের ডেপুটি এক্সিটিউটিভ ডিরেক্টর শার্লট পেত্রি-গোর্নিজকা বলেন, “কমিউনিটিগুলোতে কানেক্টিভিটি অসমতা নির্নয়ে করতে আমরা একসাথে বিশ্বব্যাপী স্কুলগুলো ম্যাপিং করছি। স্কুলগুলোকে ইন্টারনেটে সংযুক্ত করতে ও মানসম্মত ডিজিটাল শিক্ষাদান নিশ্চিতে অংশীদারিত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; এটিই লক্ষ্য অর্জনের মূল চাবিকাঠি। এর মাধ্যমে প্রত্যেক শিশু ও তরুণ উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে।’
প্রতিবেদন:
ইআইইউ’র প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে যে, স্কুল কানেক্টিভিটি কীভাবে শিক্ষার ক্ষেত্রে সুফল নিয়ে আসতে পারে এবং শিশুদের সমৃদ্ধ ক্যারিয়ারের সুযোগ তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে; পাশাপাশি, এটি অর্থনৈতিক বিকাশ ও কমিউনিটিগুলোর উন্নয়নেও অবদান রাখবে। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, শিশুদের জন্য ব্যক্তিপর্যায়ে এমন সুবিধা সামগ্রিকভাবে দেশের উচ্চ আয়, উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও সবার সুস্থতা নিশ্চিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এই সুযোগ-সুবিধাগুলো শিশুদেরকে উন্নয়ন ছাড়াও বৃহৎ অর্থে সমাজের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় নেতৃস্থানীয় ভূমিকা রাখবে।
প্রতিবেদনে উল্লেখিত স্কুল কানেক্টিভিটির অন্যান্য উল্লেখযোগ্য সুবিধাগুলো হলো:
• শিক্ষার মানোন্নয়ন
• ব্লকচেইন, বিগ ডেটা, মেশিন লার্নিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো সময়োপযোগী বিষয়গুলো ব্যবহারে সুযোগ বৃদ্ধি
• দক্ষ, উদ্ভাবনী ধারণা সম্পন্ন মানবসম্পদ তৈরি
• কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি
• কমিউনিটির উন্নয়ন
• অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বিকাশ
এই উদ্যোগে অন্তর্ভুক্ত হতে এবং বিস্তারিত জানতে আগ্রহীরা ভিজিট করুন- www.gigaconnect.org ।