জনসাধারণের দোরগোড়ায় পঞ্চম প্রজন্মের ইন্টারনেট সেবা (৫জি)। আগামী রোববার (১২ ডিসেম্বর) থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকের মাধ্যমে রাজধানীর ৬টি স্থানে পরীক্ষামূলক ভাবে চালু করা হবে এই সেবা।
১২ ডিসেম্বর জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি দিবস।তাই পরীক্ষামূলক ৫জি সেবা চালুর জন্য এ দিনটিকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। ১২ ডিসেম্বর ৬টি সাইটে পরীক্ষামূলক চালু হলেও ২০২২ সালের মধ্যে রাজধানীর ২০০টি টাওয়ারে ৫জি সেবা চালু করবে অপারেটরটি।
সম্প্রতি ‘৫জি প্রযুক্তি ও টেলিটকের প্রস্তুতি’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এ কথা জানান টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহাব উদ্দিন।
এছাড়া ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, এ বছর টেলিটক ৫-জি সেবা পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করবে। আগামী বছর তা সম্প্রসারণ করবে। ডিসেম্বরের মধ্যে অন্য মুঠোফোন অপারেটরদের জন্য ৫-জি তরঙ্গ নিলাম করা হবে। ফলে আগামী বছর অন্যান্য অপারেটরও ৫-জি চালু করতে পারবে।
তিনি বলেন, ৫-জি সেবা বেশি কাজে লাগবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পকারখানায়। সেদিকেই নজর বেশি থাকবে।
টেলিটকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ রেজাউল করিম রিজভী বলেন, চলতি বছর পরীক্ষামূলক এবং আগামী বছর সীমিত আকারে ৫জি সেবা চালু হলেও এর ইকোসিস্টেম তৈরি হতে ২০২৫ সাল পর্যন্ত লাগবে।
জানা যায়, এখন যেসব এলাকায় নেটওয়ার্ক আছে সেগুলোর পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও ৫জি সেবা প্রদানের জন্য টেলিটককে ইতোমধ্যে ২ হাজার ২০৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে হবে ২০২৩ সালের মধ্যে। এছাড়া ৫জি সেবার জন্য অপারেটরটিকে ইতোমধ্যে স্পেকট্রামও বরাদ্দ দিয়েছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি)।
মোবাইল ফোনের পঞ্চম জেনারেশন ইন্টারনেটকে সংক্ষেপে বলা হয় ফাইভজি বা ৫জি। ৪জির তুলনায় অনেক দ্রুতগতিতে ইন্টারনেট থেকে তথ্য ডাউনলোড-আপলোড করা যায় এই ৫জি সেবায়। হাই ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা হয়ে থাকে ৫জি মোবাইল নেটওয়ার্কে। এর মাধ্যমে একই সঙ্গে একই সময়ে অনেক মোবাইল ফোনে দ্রুতগতিতে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়। মানুষ ও ডিভাইসের মধ্যে তৈরি হবে জিরো ডিসটেন্স কানেক্টিভিটি। এতে প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো যেমন সমৃদ্ধ হবে, তেমনি সহজ হয়ে যাবে প্রযুক্তিনির্ভর অনেক কাজ।
বলা হচ্ছে, ৫জি প্রযুক্তি মানুষের প্রতিদিনের জীবনযাত্রা বদলে দেবে। ৫জি প্রযুক্তির মাধ্যমে চালকবিহীন গাড়ি চলবে রাস্তায়। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি আরও শক্তিশালী হবে। স্মার্ট সিটি বিনির্মাণ সহজ হবে। এর সঙ্গে যুক্ত থাকা রোবট পরিচালনা করা যাবে। বাড়বে আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংস) প্রযুক্তির ব্যবহার। সেন্সরগুলোর ডাটা স্থাপিত হবে ট্রাফিক লাইটে, ঘরে, অফিসে, থানায়, পাবলিক পার্কে। ফলে নগর ব্যবস্থাপনা হবে আরো সহজ।
এছাড়া বিগডাটা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নে ৫জি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ৫জি চালু হলে আমূল পরিবর্তন আসবে চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতে। ৫জি প্রযুক্তির মাধ্যমে টেলিমেডিসিন সেবার উন্নয়নের ফলে গ্রামে বা প্রত্যন্ত এলাকায় বসেও রোগী শহরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে পারবেন। চাইলে বিশ্বের খ্যাতনামা চিকিৎকের কাছ থেকেও পরামর্শ নিতে পারবেন। দূর শিক্ষণ বা অনলাইন ক্লাসরুমের ফলে দূরগ্রাম বা প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীরা বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলের শিক্ষালাভের সুযোগ পাবে। ৫জি ডিজিটাল ডিভাইড বা প্রযুক্তিগত বৈষম্য দূর করতে সহায়তা করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, ৫জি নেটওয়ার্ক সেবা চালু হলে দেশের চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতে উন্নয়ন ঘটবে, বদলে যাবে শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ব্যবসা, মানুষের দৈনন্দিন জীবন যাত্রা। পাওয়া যাবে উন্নত টেলিমেডিসিন সেবা। এতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও সহজেই উন্নত চিকিৎসা সেবার সুযোগ গ্রহণ করতে পারবে। এমনকি দেশের চিকিৎসকের পাশাপাশি বিদেশের অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গেও পরামর্শ করা যাবে। ৫জি প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইনে ক্লাস করতে পারবে দেশের প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীরাও। অর্থাৎ হাতে মুঠোয় চলে আসবে বিশ্বের নামিদামী সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্লাস। এর মাধ্যমে দূর হবে প্রযুক্তিগত বৈষম্য। ৫জি নেটওয়ার্কে গেমিংয়ে কোনো প্রকার ল্যাগ ছাড়াই খেলা যাবে। বাফারিং ছাড়াই অনলাইনে হাই রেজ্যুলেউশন বা ৪০০ ভিডিও দেখা যাবে। একই সঙ্গে ডিস্টার্ব ছাড়াই আরো উন্নত ও স্বচ্ছভাবে ভিডিও কল করা যাবে। এ ছাড়া চালকবিহীন গাড়ি, লাইভ ম্যাপ এবং ট্রাফিক তথ্য জানার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে এই ৫জি নেটওয়ার্ক সেবা।