কমনওয়েলথ স্কলারশিপ কমিশনের (সিএসসি) ৬৫ বছরের ঐতিহ্য উদযাপনে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ব্রিটিশ কাউন্সিল। গত ৫ অক্টোবর ঢাকার ফুলার রোডে অবস্থিত ব্রিটিশ কাউন্সিল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে উদ্যোক্তা, উদ্ভাবন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি নিয়ে প্যানেল আলোচনা ছাড়াও ছিল বিভিন্ন আয়োজন। অনুষ্ঠানে নাট্যকলায় দেশের প্রথম কমনওয়েলথ স্কলার হিসেবে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা ড. সুদীপ চক্রবর্তীর নির্দেশনায় মঞ্চনাটক পরিবেশন করা হয়।
পড়াশোনা ও নেতৃত্বের গুণাবলী বিকাশে ৬৫ বছর ধরে বিশ্বজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে সিএসসি। প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই কমনওয়েলথ দেশগুলো থেকে আগত শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করছে সিএসসি প্রোগ্রাম। পড়াশোনার ক্ষেত্রে অসাধারণ দক্ষতা ও নেতৃত্বের গুণাবলী সম্পন্ন সম্ভাবনাময় ব্যক্তিদের শনাক্ত করে তাদের বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে এ কমিশন। সিএসসি কমিশনের মাধ্যমে মেধাবীদের খুঁজে বের করে তাদের পরিচর্যা ও শিক্ষাগত উন্নয়নের ছয় দশকের মাইলফলকও উদযাপন করা হয় এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। এর পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও মেধা বিকাশের প্রতি সিএসসি’র দৃঢ় প্রতিশ্রুতিকেও তুলে ধরে এ আয়োজন।
উদ্যোগ, উদ্ভাবন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি নিয়ে অনুষ্ঠিত প্যানেল আলোচনায় বক্তাদের কথায় উঠে আসে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মতামত ও তথ্য। আগামীতে কাজের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ ও সেগুলো মোকাবিলা করার উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয় এই অংশে। এছাড়াও, আলোচনায় সফল উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য তরুণ প্রজন্মকে ইতিবাচক ঝুঁকি গ্রহণে মনোবল বৃদ্ধি করতে অনুপ্রাণিত করা হয় ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও প্রদান করা হয়। উদ্যোগ, উদ্ভাবন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন এমন পাঁচজন কমনওয়েলথ অ্যালামনাই এই বিশেষজ্ঞ আলোচনায় অংশ নেন। আলোচনায় তাদের সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও সম্যক জ্ঞানকে ভিত্তি করে দেয়া পরামর্শগুলো ভবিষ্যৎ উদ্যোক্তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
আলোচনায়, “অ্যাক্সেস টু ফাইন্যান্স অ্যান্ড উইমেন্স অন্ট্রাপ্রেনারশিপ ইন বাংলাদেশ” বিষয়ে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ও সেন্টার ফর মাইক্রোফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এর নির্বাহী পরিচালক এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, পিএইচডি। এছাড়াও, নিজেদের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার যাত্রা তুলে ধরেন তরঙ্গ’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কোহিনূর ইয়াসমিন; ডিমেনশিয়া কেয়ার ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও মহাসচিব এবং প্রবীণ সেবা’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদ সুহরাওয়ার্দী; এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল ফিজিক্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও অনারারি অধ্যাপক এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শক ড. খোন্দকার সিদ্দিক-ই-রব্বানী। প্যানেল আলোচনাটি সঞ্চালনা করেন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা বাংলাদেশের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার তানজিলুত তাসনুবা।
চমৎকার একটি পরিবেশনায় দর্শকদের মুগ্ধ করে ড. সুদীপ চক্রবর্তীর নির্দেশনায় মঞ্চায়িত হয়েছে সেলিম আল দীন এর নাটক ‘স্বর্ণবোয়াল।’
ব্রিটিশ কাউন্সিলের বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর স্টিফেন ফোর্বস তার সমাপনী বক্তব্যে বলেন, “বাংলাদেশে কমনওয়েলথ স্কলারশিপ কমিশনের ৬৫ বছর পূর্তি এক অসাধারণ মাইলফলক। গত ছয় দশকে, ১৮শ’ জনেরও বেশি সংখ্যক কমনওয়েলথ স্কলার যুক্তরাজ্যে তাদের উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেছেন। পরবর্তীতে, বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী মানুষের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তারা। শিক্ষা আন্তর্জাতিকীকরণের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ব্রিটিশ কাউন্সিল। এর পাশাপাশি, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নানান ধরনের সুযোগ প্রদান করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। আজ অনবদ্য এ মাইলফলক অর্জনের দিনে আমরা কমনওয়েলথ স্কলারদের অর্জিত সাফল্য উদযাপন করছি। সেই সাথে, আগামীতেও শিক্ষা, আন্তর্জাতিক বিনিময় ও সিএসসি’র অংশীদারিত্বে আরও অনেক দশকের সহায়তা প্রদানের প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ কাউন্সিলের হেড অব এডুকেশন তৌফিক হাসান সহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
সিএসসি’র ঐতিহ্যবাহী ৬৫ বছরপূর্তির এই অনুষ্ঠান আয়োজনে ব্রিটিশ কাউন্সিলের সহযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কমনওয়েলথ স্কলারস অ্যান্ড ফেলোস (বিএসিএসএএফ)।