২০১৬ সালে পরিচয় গোপন রেখে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের সম্পর্কে তথ্য দিতে ‘হ্যালো সিটি’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। সেটিই এখন সাইবার অপরাধ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আপনি বিপদে পড়লে ওই অ্যাপটির সাহায্য নিতে পারেন।
সাইবার অপরাধের সংখ্যা দিনকে দিন যেন বেড়েই চলেছে। শুধু ২০১৭ সালে রাজধানীতে পুলিশের কাছে এ সংক্রান্ত অভিযোগ এসেছে অন্তত ৪০ হাজার। এই অভিযোগগুলোর মধ্যে পুলিশের ‘হ্যালো সিটি’ অ্যাপসের মাধ্যমেই শুধু অভিযোগ এসেছে ৫ হাজার ৮৪২টি। অভিযোগগুলোর মধ্যে ফেসবুক ভিত্তিক অপরাধের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি।
প্রতিদিন রাজধানীর অর্ধশত থানায় গড়ে তিন চারটা অভিযোগ আসে। আবার থানার বাইরেও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন এবং টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের হেল্প ডেস্কেও দেদার অভিযোগ জমা হচ্ছে।
তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সাইবার হেল্প ডেস্কের তথ্য অনুযায়ী, ৭০ ভাগ অভিযোগই আসে নারীদের থেকে। সাইবার হয়রানি থেকে সুরক্ষা দিতে পুলিশের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগে একটি সাইবার হেল্প ডেস্ক রয়েছে। এই ডেস্কে গত দুই বছরে ১৫ হাজারেরও বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযোগগুলোর মধ্যে কাট আউট ছবি, অর্থাৎ একজনের নগ্ন ছবির ওপর আরেকজনের মুখ জুড়ে দেওয়া এবং পর্নোগ্রাফির অভিযোগই সবচেয়ে বেশি। তাছাড়া ইউটিউব ও বিভিন্ন সাইটে এসব পর্নোগ্রাফি ও ছবি ‘আপলোড’ করার হারও অনেক বেশি। এ সংক্রান্ত অভিযোগে পুলিশের গ্রেফতারের হারও নেহাত কম নয়। ২০১৭ সালে এসব অভিযোগে ৭২ জনকে গ্রেফতার করে ডিএমপি। তাছাড়া চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে আরো ৪০ জনকে গ্রেফতার করেছে তারা।
সম্প্রতি জাতীয় সংসেদ এমন হিসেব তুলে ধরেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।তবে কিছু অভিযোগের বিষয়ে পুলিশ ফেসবুককে জানালেও তার সবকটিতে আবার তারা সাড়া দেয়নি কর্তৃপক্ষ। গত বছর এমন ৪৪টি ই-মেইল করা হলেও ফেইসবুক সাড়া দিয়েছে ২৩টিতে। পুলিশ বলছে, অভিযোগগুলো পর্যালোচনা করলে মূলত ভূয়া আইডির মাধ্যমে অপরাধ সংগঠনের বিষয়টিই বেশি চোখে পড়ে। আর এ কারণে অনেক সময় অপরাধীকে ধরাটা কঠিন হয়ে পড়ে।
এমন অবস্থার পরেও আপনার ভরসা হয়ে উঠতে পারে হ্যালো সিটি ডিজিটাল মাধ্যমটি।দেশের ১৭ কোটি মানুষ পরিচয় গোপন রেখেই এই অ্যাপসের মাধ্যমে পুলিশকে চার ক্যাটাগরিতে তথ্য জানাতে পারবে। ‘হ্যালো সিটি’ নামের এই অ্যাপসটির মাধ্যমে যে কেউই দেশ বা বিদেশ থেকে অপরাধের তথ্য জানাতে পারবে এবং পরিচয় বা মোবাইল নম্বর উল্লেখ না করেই তথ্য জানাতে পারবে।
“Hello CT” ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের Counter Terrorism Unit কে তথ্য প্রদান সংক্রান্ত একটি এপ্লিকেশন জঙ্গীবাদ/উগ্রবাদ, সাইবার ক্রাইম, বোমা/ বিস্ফোরক/ অস্ত্র/মাদক, আন্তঃদেশীয় অপরাধ/ জালিয়াতি,মোস্ট ওয়ান্টেড ব্যক্তি সর্ম্পকে নিজের পরিচয় গোপন রেখে “Hello CT” অ্যাপ্ এর মাধ্যমে পুলিশকে তথ্যাদি প্রেরণ করতে পারবেন। এ মুহুর্তে Android Mobile Phone ব্যবহারকারী “Hello CT” অ্যাপটি ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারবেন। তবে খুব শীঘ্রই iphone ও Windows মোবাইল ব্যবহারকারীগণও অ্যাপটি ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারবেন।
Android Mobile Phone ব্যবহারকারী নিম্নক্তভাবে অ্যাপটি Free Download করবেন-
“Google play Store ” – Search – “ Hello CT ”- Download/Install
সাইবার ক্রাইমঃ
আপনার বা আপনার পরিচিত যে কারো ফেসবুক/ ই-মেইল/টুইটার/ লিঙ্কড-ইন/ অন্যান্য যে কোন সোসাল সাইট হ্যাক কিংবা আপনার প্রোফাইল এর ছবি ব্যবহার করে কেউ কোন ভুয়া একাউন্ট তৈরী করে থাকলে কিংবা আপনার ছবি বা ব্যক্তিগত তথ্য বিনা অনুমতিতে চেনা/ আচেনা কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে কেউ অন্যত্র ব্যবহার করে থাকলে ইত্যাদি নানাবিধ অনলাইন সংক্রান্ত তথ্য আপনি আমাদের দিতে পারেন। উদাহরণ স্বরুপ আপনি লিখতে পারেন: “ আমার ফেসবুক হ্যাক হয়েছে। গতকাল থেকে লগ-ইন করতে পারছিনা। আমার একাউন্টের লিঙ্ক:………………”
কিভাবে এপ্লিকেশনটি ব্যবহার করবেনঃ
এপ্লিকেশনটির হোম পেইজে থাকা ৫(পাঁচ)টি বাটনে ক্লিক করে আপনি বিভিন্ন প্রকার গুরুত্বপূর্ন তথ্য আমাদের দিতে পারছেন। এই ৫ (পাঁচ)টি বাটনের সবকটিতে ক্লিক করলেই আপনি দুইটি ভিন্ন ট্যাবে দুইটি ভিন্ন ফরম পাবেন যেগুলো হলোঃ “নতুন তথ্য” এবং তথ্য সংযোজন”।
নতুন তথ্যঃ
নতুন তথ্য ফরমে আপনি শুরুতেই পাবেন“অপরাধের তথ্য” নামক একটি টেক্সট বক্স। এটি পূরণ করা বাধ্যতামূলক। আপনার কাছে থাকা ছোট/বড় নানাবিধ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আপনি এই বক্সে লিখতে পারবেন। আপনার তথ্য যত বড় কিংবা যত ছোটই হোক না কেন সেটি আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন।
এর পরেই আপনি পাবেন“অপরাধের ঘটনাস্থল” নামক একটি ড্রপ-ডাউন মেনুবার।
অপরাধের ঘটনাস্থলঃ
এখানে আপনি ৩(তিন)টি অপশন পাবেনঃ মহানগর এলাকা/জেলা/বাংলাদেশের বাইরে। এই ৩ (তিন) টির মধ্য থেকে আপনাকে আপনার কাক্সিক্ষত ঘটনাস্থলটি নির্বাচন করতে হবে। আপনার দেয়া তথ্যটি যদি কোন মেট্রোপলিটন এলাকায় হয়ে থাকে তবে আপনি নির্বাচন করবেন “মহানগর এলাকা”। আবার, আপনার দেয়া তথ্যটি যদি হয়ে থাকে বাংলাদেশের কোন একটি জেলার, তবে আপনি “জেলা” নির্বাচন করবেন। অপরদিকে, আপনার তথ্যটি যদি দেশের বাইরের কোন স্থানে ঘটে যাওয়া তথ্য হয়ে থাকে তবে “বাংলাদেশের বাইরে” নির্বাচন করতে হবে। আপনি যদি অপরাধের ঘটনাস্থলে মহানগর এলাকা” নির্বাচন করে থাকেন, তবে ঠিক তার নিচেই আপনি “মহানগরের নাম” লেখা অপর একটি ড্রপ-ডাউন মেনুবার পাবেন যেখানে থেকে আপনি আপনার কাক্সিক্ষত মহানগরের নাম নির্বাচন করতে পারবেন। অতঃপর তার নিচে অবস্থিত অপর একটি ড্রপ-ডাউন মেনুবার থেকে সংশ্লিষ্ট মহানগরের যেই থানার অধীনে ঘটনাটি ঘটেছে সেই থানার নামটি আপনাকে নির্বাচন করতে হবে। অনুরুপভাবে, মহানগরের স্থানে যদি আপনার তথ্যটি কোন জেলার অভ্যন্তরে হয়ে থাকে তবে আপনি অপরাধের থানার আবনে ঘটনাটি ঘটেছে যেই থানার নামটি আপনাকে নির্বাচন করতে হবে। অনুরুপভাবে, মহানগরের স্থানে যদি আপনার তথ্যটি কোন জেলার অভ্যন্তরে হয়ে থাকে তবে আপনি অপরাধের ঘটনাস্থলে “জেলা” নির্বাচন করবেন এবং তার নিচে “জেলার নাম” নামক ড্রপ-ডাউন মেনুবার থেকে আপনার তথ্য সংক্রান্ত জেলার নাম নির্বাচন করবেন এবং সবশেষে “থানার নাম” নামক ড্রপ-ডাউন মেনুবার থেকে সংশ্লিষ্ট থানার নামটি নির্বাচন করতে হবে। আর, আপনার দেয়া তথ্যটি যদি দেশের বাইরের, তবে “অপরাধের ঘটনাস্থল” এ “বাংলাদেশের বাইরে ” নির্বাচন করতে হবে এবং এর নিচেই তখন একটি টেক্সট বক্স আসবে যেখানে সেই দেশের নামটি টাইপ করতে হবে আপনাকে।
অপরাধের ঘটনাস্থল এর পরেই আরেকটি অংশ পাওয়া যাবে যেটি হলো “তথ্য দাতার পরিচয়”।
তথ্য দাতার পরিচয়ঃ
তথ্য দাতার পরিচয় নিঃসন্দেহে গোপন রাখা হবে এবং এটি পূরণ করা বাধ্যতামূলক নয়। এটি তথ্য দাতার সম্পূর্ণ ঐচ্ছিক একটি বিষয়। তবে কেউ যদি তার তথ্য দিতে চায় তবে এই অংশে থাকা ২(দুই) টি টেক্সট বক্স যথাক্রমে ফোন নম্বর ও ঠিকানা পূরণ করতে হবে।
সবশেষে পাওয়া যাবে “তথ্য সংক্রান্ত কোন ছবি, ভিডিও বা অডিও থাকলে সংযুক্ত করুন (যদি থাকে)” নামক অংশ। প্রদত্ত তথ্য সংক্রান্ত কোন ছবি, ভিডিও বা অডিও থাকলে সংযুক্ত করুন (যদি থাকে)
আপনি যে তথ্য প্রদান করছেন সেই তথ্য সংক্রান্ত যদি কোন অডিও/ভিডিও বা ছবি আপনার কাছে থেকে থাকে তবে সেটি আপনি এই অংশে সংযুক্ত করতে পারেন। তবে, সংযুক্ত করার মত কিছু না থাকলেও কোন সমস্যা হবে না। অতঃপর আপনার পূরণকৃত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি আমাদের নিকট পৌছানোর জন্য “SUBMIT” বাটনে ক্লিক করতে পারেন। অথবা তথ্যটি আমাদের নিকট প্রেরণ না করে মুছে ফেলতে চাইলে “CANCEL” বাটনে ক্লিক করতে পারেন।
“SUBMIT” বাটনে ক্লিক করার সাথে সাথে আপনি একটি বার্তা পাবেন “আপনার তথ্যটি সঠিকভাবে জমা হয়েছে। প্রস্তাবিত তথ্যের আইডি নম্বর ০০০০০০। পরবর্তী সময়ে তথ্যটি সংশোধন কিংবা পুনরায় সংযোজন করতে আইডি টি সংরক্ষণ করুন।”
এই বার্তা থেকে প্রাপ্ত “তথ্য আইডি” টি আপনি সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। তাহলে ভবিষ্যতে এই তথ্য সংক্রান্ত কোন নতুন খবর আমাদের নিকট পৌছাতে হলে আপনার কাজ অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে।
“নতুন তথ্য” নামক ট্যাব এর কার্যপ্রণালী এখানেই শেষ। এবার যদি আপনি আপনার প্রদানকৃত কোন তথ্য সংযোজন কিংবা সংশোধন করতে চান তবে আপনাকে যেতে হবে “তথ্য সংযোজন” নামক ট্যাব।
তথ্য সংযোজন
এই ট্যাব এর শুরুতেই আপনি দেখতে পাবেন “তথ্য আইডি নম্বর” নামক একটি সার্চ বক্স। এখানে আপনার পূর্বে প্রদানকৃত তথ্য যেটি আপনি সংযোজন কিংবা সংশোধন করতে চান সেটির আইডি নম্বর লিখতে হবে। এরপর সার্চ বাটনে ক্লিক করলে আপনি আপনার পূরণকৃত ফরমটি পেয়ে যাবেন এবং সেখানে আপনার সেই তথ্য সংযোজন কিংবা সংশোধন করতে চান, সেগুলো করে নিয়ে আবার “SUBMIT” বাটনে ক্লিক করলে আপনার পূর্বের তথ্যের সাথে বর্তমানে প্রদত্ত তথ্যটি সংযোজিত কিংবা সংশোধিত হয়ে যাবে। তথ্য সংযোজন করার পর আপনি একটি বার্তা পাবেন। “আপনার তথ্যটি সঠিকভাবে জমা হয়েছে। প্রস্তাবিত তথ্যের আইডি নম্বর ০০০০০০। পরবর্তী সময়ে তথ্যটি সংশোধন কিংবা পুনরায় সংযোজন করতে আইডি টি সংরক্ষণ করুন।” মনে রাখবেন, তথ্য আইডি নম্বর একই থাকবে, শুধুমাত্র তথ্যটি পরিবর্তন হয়ে যাবে। আপনি চাইলে একই তথ্য আইডি একাধিকবার সংযোজন কিংবা সংশোধন করতে পারেন।