ঘরে বসে অনলাইন কোর্স করতে চান? গ্রাফিকস ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট থেকে শুরু করে দরাকরি অনেক কোর্স এখন ঘরে বসে অনলাইনে করা যায়। শুধু দরকার ইচ্ছা, মানসিক শক্তি, ধৈর্য, কঠোর পরিশ্রম, হাল ছেড়ে না দেওয়া। একবার শিখে ফেলতে পারলেই মাসে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা যায়। বিশেষ করে অনলাইন প্রশিক্ষণ তো মেয়েদের জন্য দারুণ উপযোগী। গ্রাফিকস ডিজাইনের গাইডলাইন নিয়ে টেকজানোতে লেখা প্রকাশের পর অনেকেই ই-লানিং নিয়ে লেখার অনুরোধ করেন। এ লেখাটি তাই ই-লার্নিং: ঘরে বসে অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং কোর্স বিষয়ে খুঁটিনাটি নিয়ে।
শুরু করব ই লার্নিং দিয়ে। কি এই ই-লার্নিং কেনই বা এটি গুরুত্বপূর্ণ?
ই-লার্নিং
ই-লার্নিংকে বলা চলে আগামী দিনের শিক্ষা পদ্ধতি।বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভাবনীয় বিকাশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বদলে যাচ্ছে পৃথিবী। উধাও হয়ে যাচ্ছে চার দেয়ালে বন্দী শিক্ষাব্যবস্থাও। এখন শিক্ষা মানেই বৈশ্বিক ভাবনা, বৈশ্বিক যোগাযোগ। মাত্র দুই দশক আগে যা ছিল দূরের, এখন তা হাতের মুঠোয়। শিক্ষায় আধুনিকযোগাযোগব্যবস্থার এত বিস্তৃত ব্যবহার হচ্ছে এবং সেটাও আবার এত দ্রুত বদলে যাচ্ছে যে তার নিত্যবিকাশের খবর রাখাও দুঃসাধ্য।
প্রাচীনকালে শিক্ষা বন্দী ছিল হয় রাজপ্রাসাদে, নয় গুরুগৃহে। সেখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকারই ছিল না। ইসলাম প্রথম মানুষের জন্মনির্বিশেষে সবার শিক্ষায় সমানাধিকারের স্বীকৃতি দেয়। ইসলামে প্রত্যেক নরনারীর জন্য বিদ্যার্জন ফরজ করা হয় এবং এক ঘণ্টার জ্ঞানচর্চাকে হাজার রজনীর এবাদতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ঘোষণা করা হয়। তার হাজার বছর পর ফরাসি বিপ্লবের মাধ্যমে প্রত্যেক নাগরিকের শিক্ষা অর্জনের অধিকারের স্বীকৃতি মেলে। সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব প্রত্যেক নাগরিকের শিক্ষালাভকে কেবল অধিকার বলে স্বীকৃতি দিয়েই ক্ষান্ত থাকেনি, প্রত্যেক নাগরিককে বিদ্যার্জনের সব সুযোগ অবারিত করে সবার জন্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক ঘোষণা করে এবং প্রত্যেক সোভিয়েত নাগরিককে বিদ্যার্জনে বাধ্য করে। শিক্ষার যাবতীয় ব্যয় ও কর্তব্যাদি রাষ্ট্র বহন ও পালন করে। ফলে মানবসভ্যতা এক নতুন যুগে প্রবেশ করে।
পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় শিক্ষাও অন্যান্য শিল্পপণ্যের মতোই একটি লাভজনক পণ্য। পশ্চিমা পুঁজিবাদী দেশগুলো এই বাণিজ্যিক পণ্যের উৎপাদক এবং বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলো তার অসহায় ভোক্তা। এই ব্যবস্থায় দরিদ্র দেশগুলো তাদের যাবতীয় সামর্থ্য উজাড় করে যাদের বিশেষজ্ঞ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলে, পশ্চিমের ধনী দেশগুলো তাদের বেশি বেতনে কিনে নিয়ে যায়। এই মেধা পাচারের ফলে গরিব দেশে থেকে যায় নিম্নজ্ঞান ও নিম্নদক্ষতাসম্পন্ন জনগোষ্ঠী, যারা জাতীয় প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধি অর্জনে সামান্যই অবদান রাখতে পারে।
তাহলে কি সামর্থ্যহীন মানুষ বা দেশের জনগণের জন্য শিক্ষার প্রবেশদ্বার চিরকালই রুদ্ধ থাকবে? মানবদরদি শিক্ষাবিদেরা এ সমস্যার একটি সমাধান খুঁজছিলেন। রেডিও আবিষ্কারের প্রায় অর্ধশতাব্দী পরে ১৯৬০–এর দশকে এ প্রশ্নের জবাব খুজে পান তারা। রেডিওকে শিক্ষাদানের কাজে ব্যবহার শুরু করেন, যাতে বিদ্যালয়ের চৌকাঠ মাড়ানোর সৌভাগ্যবঞ্চিত মানুষ ঘরে বসে শিক্ষা লাভ করতে পারে।
মুক্তশিক্ষার এই ব্যবস্থা সারা দুনিয়ায় তোলপাড় সৃষ্টি করে৷ কিন্তু এই ব্যবস্থায় একটি সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছিল না। সেটা হলো, ঠিক যখন রেডিওতে শিক্ষাবিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়, কোনো কারণে কেউ যদি তা তখন শুনতে না পারে কিংবা একবার শুনে মনে রাখতে না পারলে আরেকবার শোনার ব্যবস্থা কী হবে? অনুষ্ঠানটি বারবার প্রচার করে তারও সমাধান হলো বটে, কিন্তু যখন খুশি তখন শোনার সুযোগ তাতে হচ্ছিল না।
বিজ্ঞানের আরেকটি নতুন আবিষ্কার টেপ রেকর্ডার মুক্ত বা দূর শিক্ষণকে অনেক সহজ করে দেয়। আমাদের দেশে গত শতকের শেষ পর্যন্ত এই প্রযুক্তিই ছিল ভরসা। এরপর তার সঙ্গে যুক্ত হলো ভিডিও। এখন শুধু শোনা নয়, শিক্ষককে দেখা বা শিক্ষকের পক্ষে কোনো কিছু করে দেখানো সহজ হয়ে যায়।
কম্পিউটার সহজলভ্য হলে এবং ব্যবহার কৌশল আরও সহজ হয়ে গেলে কম্পিউটার প্রযুক্তি দূরশিক্ষণের খোলনলচে বদলে দেয়। প্রথমে ফ্লপি ডিস্ক, অতি অল্প দিনের মধ্যেই কম্প্যাক্ট ডিস্ক, অডিও এবং অচিরেই ভিডিও ডিস্ক শিক্ষা ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ আরও সহজ করে তোলে। এই প্রযুক্তি চালু হতে না–হতেই এক বিপ্লব ঘটে যায় যখন আবিষ্কৃত হয় ইন্টারনেট যোগাযোগব্যবস্থা। ইন্টারনেট আবিষ্কারের পরপরই বিশ্বব্যাপী রাষ্ট্রের প্রায় সব কর্মকাণ্ডে ঘটে যায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন। সুশাসন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহির দাবি যত প্রবল হয়, ততই দ্রুত চালু হয়ে যায় ই-গভর্ন্যান্স, ই-ব্যাংকিং, ই-লার্নিং ইত্যাদি। এক কথায়, জীবনের পরতে পরতে এখন ইলেকট্রনিকসের ব্যবহার। ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, পামটপের কাল কবে বাসি হয়ে গেল, তা বুঝতে না বুঝতেই এসে গেল মোবাইল ফোনভিত্তিক নিত্যনতুন অ্যাপ্লিকেশন বা সংক্ষেপে অ্যাপস। মোবাইল অ্যাপসের কল্যাণে দুনিয়া এখন হাতের মুঠোয়।
ইলেকট্রনিকস প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থাকে বলা হচ্ছে ইলেকট্রনিক লার্নিং বা সংক্ষেপে ই-লার্নিং। রেডিও থেকে মোবাইল অ্যাপস পর্যন্ত যেসব প্রযুক্তির কথা উল্লেখ করা হলো, তা সবই ই-লার্নিংয়ের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ এই শিক্ষা ইলেকট্রনিকস প্রযুক্তিনির্ভর, যে প্রযুক্তি এখন সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ী। ই-লার্নিং বিশ্বব্যাপী দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে। এই প্রযুক্তি শিক্ষকের ভিডিও ক্লিপ, ডিজিটাল কনটেন্ট ইচ্ছেমতো বারবার দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। এমনকি, স্কাইপ, ভিডিও কনফারেন্সিং প্রযুক্তির আবিষ্কার প্রকৃতপক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে দূরে রেখেও মুখোমুখি বসাতে পেরেছে। যুক্ত হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, টুইটার প্রভৃতি। তরুণ প্রজন্মের কাছে ভীষণ জনপ্রিয় এই দুটি যোগাযোগমাধ্যম এখন শিক্ষাক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। অতিসম্প্রতি যুক্ত হয়েছে স্মার্টফোনভিত্তিক অ্যাপস।
ধারণা করা হচ্ছে, আগামী অন্তত এক দশক শিক্ষােক্ষত্রে মোবাইল অ্যাপস একচ্ছত্র আধিপত্য করবে। তবে প্রযুক্তির অতি দ্রুত পরিবর্তনের এই যুগে অচিরেই হয়তো নতুন কোনো প্রযুক্তি মোবাইল অ্যাপস প্রযুক্তিকেও পেছনে ফেলে দেবে। এভাবে ই-লার্নিং শিক্ষার এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। এই ব্যবস্থা মানুষের শ্রম যেমন লাঘব করেছে, তেমনি বহুগুণে সাশ্রয় ঘটিয়েছে সময় ও অর্থের। আমাদের দেশেও ই-লার্নিং জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ই-লার্নিং এ দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে যুগান্তকারী রূপান্তর ঘটাতে পারে।
এতো গেল ই-লার্নিংয়ের ইতিহাস। এবার চলুন দেখে আপনার জন্য উপযোগী কোনটি?
কোথায় শিখবেন?
বাংলাদেশে এখন মোবাইল ইন্টারনেট বা ফেসবুক ব্যবহার বেড়েছে বহুগুনে। মানুষ এখন সবচেয়ে বেশি সময় কাটায় ফেসবুকে। তাই এখান থেকেই যদি ইলার্নিং গ্রহণ করা যায় তাহলে বেশি কার্যকর হতে পারে।আপনার জন্য এক্ষেত্রে বিভিন্ন পোস্ট বা ব্লগ কাজে লাগতে পারে।
ই লার্নিংয়ের ক্ষেত্রে আপনার মাস্টার হতে পারে গুগল, ইউটিউব ও ফেসবুক।
ইউটিউব
আপনি কোন বিষয়টি শিখতে চান? ইউটিউবে যান সে বিষয়ে সার্চ করুন। ভিডিও দেখে নিজেই শিখে নিতে পারেন।
গুগল সার্চ
গুগলের সার্চ ইঞ্জিনে প্রত্যাশিত বিষয়টি লিখুন। অনেক ফলাফল পাবেন। দরকার অনুযায়ী শিখে নিন।
ফেসবুক
বর্তমানে ফেসবুক বিশাল শেখার ভান্ডার। তবে এখানে দরকারি বা বাজে অনেক কিছু পাবেন। বেছে নেওয়ার দায়িত্ব আপনার। সেরাটাকেই নিন। কাজে লাগান। ফেসবুকের কয়েকটি গ্রুপ ই লার্নিংয়ে কাজে লাগতে পারে। এর মধ্যে রয়ছেে ইংরেজি শেখার জন্য সার্চ ইংলিশ গ্রুপ ও তথ্যপ্রযুক্তি শেখার জন্য রয়েছে ডিজিটাল স্কিলস ফর বাংলাদেশ গ্রুপের মতো নানা গ্রুপ ও পেজ।
ব্লগ
অনলাইনে যাঁরা ঘরে বসে নানা বিষয়ে শিখতে চান তাঁরা বিভিন্ন ব্লগ বা ওয়েবসাইট থেকে নানা পরামর্শ ও গাইডলাইন পেতে পারেন। টেকজানো ডটকম (https://techjano.com/) আপনাদের জন্য সে চেষ্টা করে যাচ্ছে ।
এবার আসব অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং শেখার প্ল্যাটফর্মগুলোর বিষয়ে।
অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং শেখার প্ল্যাটফর্ম
শুরু করি কোডার্সট্রাস্ট দিয়ে। তারা মোট পাঁচটি কোর্স করায়। প্রতিটি কোর্স ১৬ হাজার টাকায়। কোর্স আছে গ্রাফিকস, ওয়েব, ডিজিটাল মার্কেটিং, ওয়ার্ডপ্রেস, অ্যাকাউন্টিং বিষয়ে।
প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশ ব্যবস্থাপক আতাউল গণি ওসমানী জানান, বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে সম্ভাবনা ও মেধা রয়েছে। তাঁদের সঠিকভাবে পথ দেখানো গেলে ভবিষ্যতে তাঁরা নিজেদের দক্ষতা দিয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন। মার্কেটপ্লেসগুলোর চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও কাজ পেতে সব ধরনের সহযোগিতার লক্ষ্যে কাজ করছে কোডারসট্রাস্ট। এখন অনলাইনে প্রশিক্ষণের যুগ। সময় ও খরচ দ্রুটোই বাঁচে। এছাড়া উন্নত ট্রেনারের কাছ থেকে ভালো ট্রেনিং পেলে ঘরে বসেই শিখে নেওয়া যায়। তবে এক্ষেত্রে পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকতে হবে। জানা লাগবে ইংরেজি, সাধারণ কম্পিউটারের বেসিকস। বাংলাদেশের ট্রেনাররা এখন বিদেশিদেরও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। বিস্তারিত http://coderstrustbd.com/course-category/online/ ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।
আগামী এক বছরে ১০ হাজার ফ্রিল্যান্সার তৈরির লক্ষ্যে মূলত তারা কাজ করছে। ঘরে বসে কীভাবে সবাই ফ্রিল্যান্সিং শিখতে পারে সে বিষয়ে নানা কোর্স চালু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কোডার্স ট্রাস্ট ২০১৪ সালে যাত্রা শুরু করে। তরুণদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে কাজের সুযোগ তৈরি করছে তারা। শুধু দেশেই নয়, বিশ্বের আরও ৫টি দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোর চাহিদার ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন কোর্স ডিজাইন করে। যেন শিক্ষার্থীরা কোর্সের মধ্যেই কাজ পায়।
ওসমানী জানান, বর্তমানে প্রযুক্তি বিশ্বে আপনাকে জানান দিতে এবং দক্ষ করে তুলতে বেশকিছু বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে রেসপন্সিভ ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক ডিজাইনিং, অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, এসইও এবং এসএমএস। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে কাজের ক্ষেত্রে দুটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমটি-টেকনিক্যাল স্কিল। এর অর্থ_ আপনি যে বিষয় নিয়ে কাজ করতে চান যেমন ওয়েব ডিজাইন বা গ্রাফিক্স ডিজাইনের ওপর ভালোভাবে দক্ষ হতে হবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে সফটস্কিল। এর অর্থ, যোগাযোগ এবং নিজেকে উপস্থাপনের পদ্ধতি। এ প্রতিষ্ঠানটি দুই বিষয়েই প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে। শিক্ষার্থীদের অনলাইনে লাইভ ক্লাসের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। যার ফলে দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই ফ্রিল্যান্সিং শিখতে পারবেন।
ক্রিয়েটিভ আইটি
বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে অন্যতম নাম ক্রিয়েটিভ আইটি। গত বছরে আন্তর্জাতিক অনলাইন ট্রেনিং প্ল্যাটফর্মের সহযোগিতায় ক্রিয়েটিভ ই-স্কুল নামে অনলাইন প্রশিক্ষণের কার্যক্রম শুরু করে ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউট।
ক্রিয়েটিভ আইটর সিইও মো. মনির হোসেন বলেন, ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউট প্রায় ১০ বছর ধরে আইটি প্রফেশনাল গড়ে তুলতে এখন পর্যন্ত ১৮ হাজারের বেশি প্রশিক্ষণার্থীর ক্যারিয়ারে সাফল্য এনে দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার বাইরে ও প্রবাসীদের থেকে অনলাইন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালুর অনুরোধ পাচ্ছিলাম। তারই প্রেক্ষাপটে ক্রিয়েটিভ-ই-স্কুলের অনলাইন কার্যক্রম শুরু করছি। এখন থেকে গৃহিণী, চাকরিজীবী, শিক্ষার্থী, ঢাকার বাইরের বা প্রবাসের যে কেউ সহজেই এই অনলাইন স্কুলে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন।এক বছর পেরিয়ে অনলা্ন কার্যক্রম দারুণ সফল। এখন যে কেউ ঘরে বসে অনলাইনে প্রশিক্ষণ নিতে পারছেন।
অনলাইন প্রশিক্ষণে আগ্রহীদের http://www.creativeeschool.com/apply এই ঠিকানায় যেতে হবে।
ইশিখন
দেশে তরুণদের খুব কম খরচে অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিংয়ের নানা কোর্স করায় ইশিখন। কোর্সের গুরুত্ব ঠিক রাখতে ও আগ্রহ ধরে রাখতে এ বছর ৪০০ থেকে ৭২০ টাকা নিবন্ধন ফি নেয় তারা। তবে শিক্ষার্থীদের ৩ থেকে ৫ মাস মাসের প্রতিটি কোর্স অনলাইনে পুরোপুরি বিনা মূল্যে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেয়। শিক্ষার্থীদের জন্য ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইন, অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ, এফিলিয়েট মার্কেটিংসহ অনলাইন আয়ের উপযোগী কোর্স শেখানোর উদ্যোগ নেয় ইশিখন।
ইশিখনের উদ্যোক্তা ইব্রাহিম আকবর জানান, বর্তমান প্রযুক্তির সাথে উন্নয়নশীল বাংলাদেশকে তাল মিলিয়ে চালিয়ে যেতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে আমি প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেছি। দেশের বেকার সমস্যা দূর করার লক্ষ্যে বর্তমান যুব সমাজকে দক্ষ জনবল হিসেবে গড়ে তোলায় আমাদের উদ্দেশ্য। দেশসেরা স্বনামধন্য শিক্ষকদের মাধ্যমে আমাদের প্রতিটি কোর্সের ক্লাস হয়ে থাকে এবং প্রতিটি কোর্স আলাদা আলাদা শিক্ষক দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। ইন্টারনেট কানেকশনযুক্ত কম্পিউটার কিংবা স্মার্টফোন থাকলেই দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে অনলাইনে ঘরে বসে এইচএসসি পাশ যেকেউ এই কোর্সে অংশ নিতে পারবেন। যাদের ইন্টারনেট কানেকশন নেই, তারা আমাদের ডিভিডি সংগ্রহ/অর্ডার করতে পারেন। বাংলাদেশের যেকোন প্রান্তে কুরিয়ারের মাধ্যমে আমরা ডিভিডি ডেলিভারি দিয়ে থাকি।
এর আগে ৫ হাজার শিক্ষার্থীকে ১০টি কোর্সের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। শিক্ষা বিষয়ক এই ওয়েবসাইটটি ফ্রিল্যান্সিং ছাড়াও এসএসসি, এইচএসসি, বিশ্ববিদ্যালয় ভতি, বিসিএস এর উপর রয়েছে লাখের উপর শিক্ষামুলক কনটেন্ট, মডেল টেস্ট, কুইজ এবং লেসন।
প্রশিক্ষণে অংশ নিতে আগ্রহীকে আবেদনের জন্য যেতে হবে : https://eshikhon.com/pro-offer/ এই ঠিকানায়।
শিখবে সবাই
ফ্রিল্যান্সিং খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কাজ করছে ‘শিখবে সবাই’। এর মাধ্যমে দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ অনলাইনে দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন। আর এই দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন। দক্ষ মেনটরের মাধ্যমে তাদের প্রতিটি কোর্স পরিচালিত হয়। বিশেষ সুবিধাগুলোর মধ্যে থাকছে ২৪ ঘণ্টা অনলাইন সেবা, ফ্রিল্যান্সিং সাপোর্ট, ইংলিশ কমিউনিকেশন, সফটস্কিল সাপোর্ট, সম্পূর্ণ মার্কেটপ্লেস ওরিয়েন্টেড প্রজেক্ট বেজড লার্নিং ও দক্ষ প্রশিক্ষক। দুই ধরনের কোর্স অফার করে প্রতিষ্ঠানটি_ একটি অনলাইন অন্যটি অফলাইন। অফলাইন কোর্সের মধ্যে রয়েছে গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, ওয়ার্ডপ্রেস ফর অল, অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং, ওয়েব রিসার্স এবং ডাটা এন্ট্রি। অন্যদিকে অনলাইন কোর্সের মধ্যে রয়েছে_ গ্রাফিক্স ডিজাইন, রেসপনসিভ ওয়েব ডিজাইন, ওয়ার্ডপ্রেস এবং গ্রাফিক-ওয়েব ডিজাইন কম্বো। ওয়েবসাইট www. shikhbeshobai.com
খান একাডেমি
বিশ্বজুড়ে সমাদৃত অনলাইন এডুকেশন প্ল্যাটফর্ম খান একাডেমি। এ বছরই এর বাংলা সংস্করণও উন্মোচন হয়েছে। সবার জন্য যে কোনো স্থানে বিনামূল্যে বিশ্বমানের শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০০৬ সালে খান একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটা করেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত উদ্যোক্তা ও শিক্ষাবিদ সালমান খান। এই একাডেমিটি মূলত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। এখানে সব বয়সের শিক্ষার্থীদের জন্য অনুশীলনী এবং বিভিন্ন কোর্স রয়েছে। যা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। খান একাডেমিতে রয়েছে নিয়মিত চর্চার অনুশীলনী, নির্দেশনামূলক ভিডিও, ড্যাশবোর্ড বিশ্লেষণ ও শিক্ষা উপকরণ। যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে ও এর বাইরে নিজেদের মতো করে অধ্যয়নের সুযোগ পাবে। যারা মূলত কম্পিউটার কোডিং বা এ ধরনের বিষয় শিখতে চায়, তারা প্রাথমিক অবস্থান তাদের কোর্স গ্রহণ করতে পারে। এখানে শেখানো হয়_ জাভাস্ক্রিপ্ট পরিচিতি, এইচটিএমএল বা সিএসএস পরিচিতি, এসকিউএল পরিচিতি, জাভাস্ক্রিপ্ট: গেম এবং ভিজুয়ালাইজেশন, জাভাস্ক্রিপ্ট: প্রাকৃতিক সিমুলেশন, এইচটিএমএল/সেএস: ইন্টার অ্যাক্টিভ ওয়েবপেজ তৈরি, এইচটিএমএল/জেএস: জেকুয়েরির মাধ্যমে ওয়েবসাইটকে ইন্টার অ্যাক্টিভ করা এবং পেশাদারের সঙ্গে পরিচিতি। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রামিং এবং কোডিং শেখানো হয়। ঠিকানা : bn.khanacademy.org
তালহা ট্রেনিং
ভার্চুয়ালপ্রেমী এডুকেশনাল নেটওয়ার্ক চালু করেছে তালহা ট্রেনিং। তারা শুধু কোনো কোর্স অফারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। তারা প্রশিক্ষক এবং শিক্ষার্থী সবাইকে একই ছাতার নিচে নিয়ে এসেছে। যেখানে থাকছে ঘরে বসেই একজন শিক্ষক ছাত্রদের ক্লাস, রেজাল্ট গ্রেডিং, শিক্ষক ব্যবস্থাপনা, লাইব্রেরি শেয়ারিং এবং থাকছে হরেক রকমের পেইড এবং ফ্রি কোর্সের সমারোহ। ব্যবহারকারী এবং প্রশিক্ষক দুটো পক্ষকেই তাদের নলেজ শেয়ারে সুযোগ দেবে। এতে করে ব্যবহারকারীরা তাদের পছন্দমতো কোর্সটি করার সুযোগ পাবেন। পুরোপুরি ভিন্ন আদলে তৈরি করা হয়েছে তালহা ভার্চুয়াল ট্রেনিং। এখানে একজন ইউজার খুব সহজেই বিনামূল্যে কোর্স করতে পারবেন। ব্যবহারকারী এবং শিক্ষকের মধ্যে রাখছে চ্যাটিং সুবিধা। ফলে ব্যবহারকারী তার শিক্ষকদের সঙ্গে খুব সহজেই যোগাযোগ করতে পারবে। এর মাধ্যমে ব্যবহার করতে পারবেন ই-লাইব্রেরি, টিটি লিঙ্ক, টিটি প্রোফাইল, টিটি শিক্ষাগত নেটওয়ার্ক, টিটি মেসেজ সিস্টেমসহ অনেক কিছু। যার মধ্যে রয়েছে ই-লাইব্রেরি, টিটি লিঙ্ক, টিটি প্রোফাইল, টিটি শিক্ষাগত নেটওয়ার্ক, টিটি মেসেজ সিস্টেম ডিজিটাল সার্টিফিকেটের ব্যবস্থা, ব্যবহারকারী এবং শিক্ষকের মধ্যে চ্যাটিং সুবিধা, ছাত্রদের ক্লাস, রেজাল্ট গ্রেডিং, শিক্ষক ব্যবস্থাপনা, লাইব্রেরি শেয়ারিং, করপোরেট ট্রেনিং, কোম্পানি ব্যবস্থাপনা, কর্মী ব্যবস্থাপনা, কর্মী নিয়োগ, অভিজ্ঞ কর্মী যাচাই, নলেজ শেয়ারিং। তাদের কোর্সগুলোর মধ্যে রয়েছে ওয়েব ডেভেলপিং, সফটওয়ার ডেভেলপমেন্ট, পিএসইপি বেসিক, পিএইচপি সার্টিফিকেশন, আউটসোর্সিং ট্রেনিং, এসইও অ্যান্ড ডিজিটাল মার্কেটিংসহ অনেক কোর্স। ঠিকানা :talhatraining.com
পেশাদার এ কোর্সগুলো বাইরে অনলাইনে আরও কয়েকটি প্ল্যাটফর্ম আপনি কাজে লাগাতে পারেন। এর মধ্যে একটি হচ্ছে আয়মান সাদিকের টেন মিনিট স্কুল ও সরকারি পোর্টাল মুক্তপাঠ।
টেন মিনিট স্কুল
দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে রবি’র অনলাইন এডুকেশন প্লাটফরম টেন মিনিট স্কুল(www.10minuteschool.com)। ২০১৬ সালের জুন থেকে প্লাটফর্মটি লাইভ ক্লাসের আয়োজন করে আসছে।
মুক্তপাঠ
মুক্তপাঠ বাংলা ভাষায় নির্মিত একটি উন্মুক্ত ই-লানিং প্লাটফর্ম। এ প্লাটফর্ম থেকে আগ্রহী যে কেউ যেকোন সময় যেকোন স্থান থেকে অনলাইন কোর্সে অংশগ্রহনের মাধ্যমে জ্ঞান ও দ্ক্ষতা অর্জন করতে পারবেন। এই প্লাটফর্মে সাধারণ শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। https://www.muktopaath.gov.bd/login/auth
অনলাইনে কোর্সের বিভিন্ন ওয়েবসাইট
www.coursera.org
www.edx.org
www.udacity.org
www.udemy.org
www.futurelearn.org
www.khanacademy.org
বাংলাদেশি দুটি ওয়েবসাইট
www.dimikcomputing.com
www.shikkhok.com
এর বাইরেও অনলাইনে শেখার অনেক প্ল্যাটফর্ম আছে। যাঁরা অনলাইনে ঘরে বসে শিখতে আগ্রহী তারা প্রাথমিক শেখার উদ্যোগটা নিজে থেকেই নিন।
তথ্যসূত্র: প্রথম আলো, সমকাল ও অনলাইন সাইট।
২ comments
This is amazing information, I got inspired after reading this blog!
Please keep posting such informational blog. So that, people like us will get inspired and implement in real life.
Thanking you
[…] […]