বর্তমানে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির আলোচিত খবর আলীবাবা রকেট ইন্টারনেট থেকে দারাজ গ্রুপকে সম্পূর্ণ কিনে নেয়ার বিষয়টি। দারাজ ডট কম ডট বিডি দেশের অন্যতম বৃহৎ এবং জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস। দারাজ নামেই সেটি বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করবে, তবে মালিকানা থাকবে আলীবাবার কাছে। সেক্ষেত্রে বলাই যায় বাংলাদেশের অনলাইন বাণিজ্যে আলীবাবার যাত্রা শুরু হলো। তারা অবশ্যই দেশের ই-কমার্স ইকোসিস্টেমকে আরো ভাল করতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, অবকাঠামো উন্নয়ন, মার্কেট সচেতনতা, প্রসেস ডেভেলপমেন্টে আসতে আসতে কাজ করবে।
১। আলীবাবা কিনেছে দারাজ গ্রুপকে যারা বাংলাদেশ সহ পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল এবং মায়ানমারে ব্যবসা পরিচালনা করে। দক্ষিন এশিয়ারই সবগুলো দেশ। এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় বাজার ভারতে ইতিমধ্যে অ্যামাজন প্রভাব বিস্তার করেছে। তাই ভারত বাদে বাকি সব অঞ্চলে একসাথে সার্ভিস দেয়া দারাজকে কিনে আলীবাবা আসলে অ্যামাজনের সাথে এক ধরণের প্রতিযোগীতায় থাকলো। এই পুরা অঞ্চলই জনবহুল, যে কোন ব্যবসার জন্য বেশ উপযোগী, বিদেশী কম্পানিগুলোর কাছে ভারতের পরে আমার মতে বাংলাদেশই ব্যবসা করার জন্য সবচেয়ে কাঙ্খিত। উল্লেখ্য আলীবাবা গ্রুপ কিছুদিন আগেই বিকাশের ২০% শেয়ার কিনেছে। সেই হিসেবে বাংলাদেশ যে এই সেক্টরে আসলেই প্রচুর সম্ভাবনাময় আলীবাবার আগমনে তা পরিষ্কার হয়ে গেলো। যারা এই দেশে অনলাইন ব্যবসা হবে না বা ভবিষ্যত নেই এই ধরণের ধারণায় ছিলেন তাদের ধারণা অবশ্যই ভুল।
২। এক বিদেশি কম্পানি আরেক বিদেশি কম্পানিকে কিনেছে কিন্তু ব্যবসা করবে আমাদের দেশে। বিদেশি কম্পানি পূর্ণ মালিকানায় সরাসরি এখানে ব্যবসা করবে এটি আগে থেকেই আমাদের দেশের বা ইন্ডাস্ট্রির পলিসিগত ভুল। দেশি কম্পানিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে যৌথ মালিকানায় বিদেশি কম্পানি ব্যবসা করবে, লাভের অংশ নিবে এমনটাই কাম্য। এক্ষেত্রে উপর মহলের পলিসি ঠিক না হলে আমাদের মত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের তেমন কিছু অবশ্য করার নেই।
৩। তবে বাংলাদেশে আলীবাবার আগমনকে স্বাগত জানাই (২ নং বিবেচনার বাইরে রেখে)। আমাদের দেশ এই সেক্টর সম্ভাবনাময় হলেও পর্যাপ্ত অবকাঠামোর উন্নয়ন, মার্কেট সচেতনতা এবং বৃদ্ধি এখনো যতেষ্ঠ নয়। আলীবাবার মত বড় কম্পানিরা এই দিকগুলোতে ভূমিকা রাখতে পারে, বিশেষ করে মার্কেট বৃদ্ধিতে। ই-কমার্স ব্যবসা এখনো শহরকেন্দ্রিক, একে দেশ ব্যাপী বিস্তৃতির জন্য, অনলাইনে কেনাকাটার ব্যাপারটিকে আস্থাশীল এবং জনপ্রিয় করতে ‘অ্যাবভ দ্যা লাইন’ মার্কেটিং যেমন টিভি/পত্রিকায় বিজ্ঞাপণও প্রয়োজন আছে যেগুলোর সামর্থ্য আলীবাবাদের মত কম্পানির আছে। শহরকেন্দ্রিক শিক্ষিত সমাজের একটি বড় অংশ যারা অনাস্থার কারণে অনলাইনে শপিং করেন না তারাও আস্তে আস্তে কেনা শুরু করবেন আশা করা যায়। এই সেক্টরে অধিক সংখ্যক কর্মসংস্থান হবে তা নির্দিধায় বলা যায়। ই-কমার্স সেক্টরে প্রতিযোগিতা বাড়বে, চাকুরিপ্রত্যাশীদের ব্যক্তিগত স্কিল ডেভেলমেন্টের বিকল্প নেই।
৪। ধারণা করা হচ্ছে আলীবাবার আগমনে ই-কমার্স সেক্টরে কিছু পরিশোধন দেখতে পাবো আমরা। মার্কেটপ্লেসের বড় যেই দ্বায়িত্ব যে পণ্যের কোয়ালিটি কন্ট্রোল করা সেদিকে উন্নতি হবে আশা করা যায়। আফটার সেলস সার্ভিসে কাজ করার আছে অনেক, রিটার্ণ/রিফান্ড নিয়েও অনেক ইস্যু এখন। বড় আরেকটি সমস্যা পণ্যের ডেলিভারি এবং ইন্সুরেন্স সিস্টেম। অনলাইন পেমেন্টের হারও বাড়াতে চাবে তারা, অন্তত বিকাশের মাধ্যমে তো অবশ্যই। বিদেশি বড় কম্পানিগুলো আসলে কিছু স্টান্ডার্ড প্রসেস অনুসরণ করে যাতে এই প্রক্রিয়াগুলো সবই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। আলীবাবাও সেগুলো এখানে প্রয়োগ করার চিন্তা নিশ্চই করবে। তবে কাজটি আমাদের দেশে অনেক চ্যালেঞ্জিং হবে, কারণ ইন জেনারেল আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে অলসতা, শর্টকাট, দূর্নীতি, কমিটমেন্টের অভাব এগুলো প্রবল বিদ্যমান। সময় লাগবে, আলীবাবার সাথে প্রতিযোগীতায় দেশি বিদেশি সব প্রতিষ্ঠানকেই এই প্রসেস ডেভেলপমেন্টে কাজ করতে হবে, আশা করা যায় সামগ্রিকভাবে ই-কমার্সের সার্ভিস ভাল হবে।
৫। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের মত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের আলীবাবার দেশে আসা নিয়ে কি চিন্তা বা করণীয় কি। আলীবাবা আসলেও তারা ব্যবসা করবে কিন্তু আমাদের দেশের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এবং তাদের পণ্য নিয়েই। তবে যারা চাইনিজ হাবিজাবির ব্যবসা করেন, সেগুলোতে অতিরিক্ত প্রফিট মার্জিন রাখেন তাদের মনে হয় একটু সতর্ক হতে হবে। যে কোন চাইনিজ প্রোডাক্ট আলীবাবা চাইলে নিজেদের চীনা ভেন্ডরদের থেকে এনে দেশেই স্টক করে বিক্রি করতে পারে। এই জায়গা ঐ জায়গা থেকে সোর্সিং করা পণ্যের চেয়ে দেশে উৎপাদিত পণ্যের নিস নিয়ে কাজ করা ভাল হবে। সবচেয়ে লাভবান হবেন দেশীয় পণ্য উৎপাদনকারীরা বোধ করি। তাদের পণ্য বিশ্বব্যাপী বিক্রয়ের ভাল মাধ্যম হতে পারে আলীবাবা। আগে যা বললাম কোয়ালিটি কন্ট্রোলে কাজ করার কথা তাদের, সেক্ষেত্রে ভুয়া ব্যবসায়ীরা টিকতে পারবে না। ফেসবুককেন্দ্রিক ব্যবসাগুলোতে ক্রেতাদের আগ্রহ কমার আশংকা আছে।
আমার ধারণা, সচেতন ক্রেতা ভাল পণ্য এবং সার্ভিস চান, এক্ষেত্রে দেশি বিদেশি কম্পানি হিসাব করে না। আলীবাবা কি করবে না করবে তা নিয়ে বেশি না ভেবে ভাল মানের পণ্য এবং সর্বোত্তম কাস্টমার সার্ভিসের নিশ্চয়তা, নিজস্ব কাস্টমার বেইজ গড়ে তোলার দিকেই দেশিয় ব্যবসায়ীদের ফোকাস রাখতে হবে। সবার জন্য শুভকামনা।
লেখক: মোঃ আল আরমান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা
স্টোরিয়া লিমিটেড (www.storrea.com)
২ comments
onek sundor akta post
valo lagce
[…] ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কি করবেন ধারণা করা হচ্ছে, আলীবাবার আগমনে ই-কমার্স সেক্টরে কিছু পরিশোধন দেখতে পাবো আমরা। মার্কেটপ্লেসের বড় যেই দ্বায়িত্ব যে পণ্যের কোয়ালিটি কন্ট্রোল করা সেদিকে উন্নতি হবে আশা করা যায়। আফটার সেলস সার্ভিসে কাজ করার আছে অনেক, রিটার্ণ/রিফান্ড নিয়েও অনেক ইস্যু এখন। বড় আরেকটি সমস্যা পণ্যের ডেলিভারি এবং ইন্সুরেন্স সিস্টেম। অনলাইন পেমেন্টের হারও বাড়াতে চাবে তারা, অন্তত বিকাশের মাধ্যমে তো অবশ্যই। বিদেশি বড় কম্পানিগুলো আসলে কিছু স্টান্ডার্ড প্রসেস অনুসরণ করে যাতে এই প্রক্রিয়াগুলো সবই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। আলীবাবাও সেগুলো এখানে প্রয়োগ করার চিন্তা নিশ্চই করবে। তবে কাজটি আমাদের দেশে অনেক চ্যালেঞ্জিং হবে, কারণ ইন জেনারেল আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে অলসতা, শর্টকাট, দূর্নীতি, কমিটমেন্টের অভাব এগুলো প্রবল বিদ্যমান। সময় লাগবে, আলীবাবার সাথে প্রতিযোগীতায় দেশি বিদেশি সব প্রতিষ্ঠানকেই এই প্রসেস ডেভেলপমেন্টে কাজ করতে হবে, আশা করা যায় সামগ্রিকভাবে ই-কমার্সের সার্ভিস ভাল হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের মত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের আলীবাবার দেশে আসা নিয়ে কি চিন্তা বা করণীয় কি। আলীবাবা আসলেও তারা ব্যবসা করবে কিন্তু আমাদের দেশের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এবং তাদের পণ্য নিয়েই। তবে যারা চাইনিজ হাবিজাবির ব্যবসা করেন, সেগুলোতে অতিরিক্ত প্রফিট মার্জিন রাখেন তাদের মনে হয় একটু সতর্ক হতে হবে। যে কোন চাইনিজ প্রোডাক্ট আলীবাবা চাইলে নিজেদের চীনা ভেন্ডরদের থেকে এনে দেশেই স্টক করে বিক্রি করতে পারে। এই জায়গা ঐ জায়গা থেকে সোর্সিং করা পণ্যের চেয়ে দেশে উৎপাদিত পণ্যের নিস নিয়ে কাজ করা ভাল হবে। সবচেয়ে লাভবান হবেন দেশীয় পণ্য উৎপাদনকারীরা বোধ করি। তাদের পণ্য বিশ্বব্যাপী বিক্রয়ের ভাল মাধ্যম হতে পারে আলীবাবা। […]