গ্রহাণু সম্পর্কে সাধারণ মানুষের জানা ও এর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করার লক্ষ্য নিয়েই বিজ্ঞানীদের উদ্যোগে ২০১৫ সালের ৩০ জুন প্রথমবারের মতো পালন করা হয় আন্তর্জাতিক গ্রহাণু দিবস। প্রতি বছর আয়োজিত হয়ে আসা গ্রহাণু দিবস সাম্প্রতিক ইতিহাসের বৃহত্তম প্রভাব অর্থাৎ ১৯০৮ সালে সাইবেরিয়ার তুঙ্গাসকার ঘটনা স্মরণে পালিত হয়। বাংলাদেশেও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন বিজ্ঞান সংগঠন আগামী ৩০ জুন দিবসটি পালন করবে।
গ্রহাণু বা অ্যাস্টরয়েড মূলত পাথরের খণ্ড যা মহাকাশে নত্রকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। আমাদের সৌরজগতের বেশিরভাগ গ্রহাণুই সূর্যের চারদিকে প্রদণিরত অবস্থায় মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের মাঝে প্রধান গ্রহাণু বেষ্টনীতে পাওয়া যায়, যা মূলত ৪৬০ কোটি বছর আগে আমাদের সৌরজগতের প্রাথমিক গঠনের পরে পাথরের অবশিষ্টাংশ।
৬ কোটি বছর আগে ডায়নোসররা যে বিলুপ্ত হয়েছিল, তাও ওই গ্রহাণুরই আঘাতে। একটি প্রায় ৪০ মিটার আকৃতির অফিস ভবনের মতো গ্রহাণু একটি মহানগরীর সমান এলাকা ধ্বংস করে ফেলতে সক্ষম। এ কারণে শতাধিক মহাকাশচারী, বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ ও ব্যবসায়ী এবং সহস্রাধিক সাধারণ জনগণ এ ধরনের কাজে ‘১০০ এক্স গ্রহাণু ঘোষণা’য় স্বাক্ষর করেন।
২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ সভায় প্রতি বছর ৩০ জুন আন্তর্জাতিক গ্রহাণু দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই দিবসটি বিশ্বব্যাপী সচেতনতামূলক কর্মসূচির একটি অংশ হিসেবে পালিত হয় যেখানে বিশ্বের মানুষ গ্রহাণু সম্পর্কে জানতে পারে, এর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হতে পারে এবং ভবিষ্যতে এর প্রভাব থেকে নিজেদের বিশ্বকে, সমাজ ও সভ্যতাকে কীভাবে রক্ষার উপায় খুঁজতে পারে।
বিজ্ঞানের কল্যাণেই প্রতি মুহুর্তে সৌরজগতের বিবর্তন এবং মহাকাশ ও পৃথিবীর ইতিহাসে গ্রহাণুর ভূমিকা সম্পর্কে খবর চলে আসছে পৃথিবীতে। প্রতিদিন মহাকাশের ছোট ছোট অনেক ঘটনার প্রভাব পৃথিবীতে ঘটছে এবং পৃথিবীর প্রভাব ইতিহাস থেকে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন পৃথিবীতে আরো বড় আকারের এরকম মহাজাগতিক প্রভাব আসা দৈবাৎ নয়। তাই আন্তর্জাতিক গ্রহাণু দিবস পালনের লক্ষ্যে সাধারণ মানুষকে গ্রহাণু বিজ্ঞান এবং গ্রহের প্রতিরার জন্য পরিকল্পনা সম্পর্কে সচেতন করা।
বাংলাদেশেও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন বিজ্ঞান সংগঠন আগামী ৩০ জুন দিবসটি পালন করবে। এর মধ্যে ডিসকাশন প্রজেক্টের সমন্বয়ে ‘মহাকাশ পর্যবেণ কমিটি’ রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে বিকাল ৫টা থেকে আয়োজন করেছে গ্রহাণু বিষয়ক তথ্যচিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, গ্রহাণু বিষয়ক বিজ্ঞান বক্তৃতা এবং আকাশ মেঘমুক্ত থাকা সাপেে টেলিস্কোপে আকাশ পর্যবেক্ষণ।
অনুষ্ঠানের সহায়তায় থাকছে জাতিসংঘ তথ্য কেন্দ্রের বাংলাদেশ ঢাকা অফিস। অনুষ্ঠানটি সকলের জন্য উন্মুক্ত। আয়োজকরা মনে করছেন, গ্রহাণু দিবস উদযাপনের মধ্যে দিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে বিজ্ঞানমনস্কতা ও বিজ্ঞানঘনিষ্টতা বৃদ্ধি পাবে, যা পৃথিবী ও এর সভ্যতাকে মহাজাগতিক বিপর্যয় থেকে রায় পথ দেখাবে। শুধু গ্রহাণু বিষয়ে সচেতনতাই নয়; বরং মহাকাশ বিজ্ঞান সম্পর্কে জানা ও চর্চার আগ্রহ তৈরিতে প্রেরণা জোগাতে দিনব্যাপী আয়োজন করা হবে বিজ্ঞান বিষয়ক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, গ্রহাণু বিষয়ক আলোচনা ও টেলিস্কোপে আকাশ পর্যবেক্ষণ, যাতে বিশ্বের সব প্রজাতির জীব রক্ষায় স্থানীয় ও বৈশ্বিকভাবে প্রত্যেক মানুষ এগিয়ে আসতে পারে।