খুব কমন একটি প্রশ্ন। অরিজিনাল উইন্ডোজ ব্যবহার করলে সত্যিই কি অ্যান্টিভাইরাস লাগে না? এখন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এমন প্রচার করা হচ্ছে। এটি কি আদৌ যৌক্তিক? চলুন বিশ্লেষণ করি।
প্রায় ১০ বছর আগে এদেশের অনেক কম্পিউটার ব্যাবহারকারীরা বলতো যে, ‘কম্পিউটারে অ্যান্টিভাইরাস ব্যাবহার না করলেও চলে’। এর কয়েক বছর পর আবার বলে ‘ফ্রি অ্যান্টিভাইরাস ব্যাবহার করলেই তো হয়, এন্টিভাইরাস কিনতে হয় নাকি?’ এর কয়েক বছর পর বলে ‘ অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার কিনবো কিন্তু কোন সফটওয়্যারের দাম কম আর সাথে ফ্রি গিফট কি আছে?’ আর গত কিছুদনি ধরে সুর পাল্টেছে। বলা হচ্ছে বা প্রচার করা হচ্ছে, ‘অরিজিনাল উইন্ডোজ কিনলে অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ক্রয় করা লাগে না।।’ কিন্তু আসল কথা ভিন্ন। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমরা অজুহাত খুব পছন্দ করি কিন্তু সেই অজুহাত যে আমাদের জন্য কতটা ক্ষতিকারক হতে পারে তা চিন্তা করি না।
ফ্রি মানেই ফাঁক-ফোকর। সস্তার তিন অবস্থা। আপনার নিরাপত্তার জন্য পেইড অ্যান্টিভাইরাসের বিকল্প নেই।
আজকাল অনেককেই বলতে শুনি , ‘অরিজিনাল উইন্ডোজ ব্যাবহার করলে অ্যান্টিভাইরাস লাগে না ’। আসলেই কি বিষয়টা তাই? প্রকৃতপক্ষে কথাটি একদমই ঠিক নয়। অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার অবশ্যই লাগবে কারন, মাইক্রোসফটের মত যুগান্তকারী প্রতিষ্ঠান যেখানে তাদের অরিজিনাল উইন্ডোজের সাথে বিল্ট ইন অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার দিয়েছে। সেখানে বুঝতে হবে যে অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার অবশ্যই ব্যাবহার করা গুরুত্বপূর্ন। কিন্তু যেহেতু অরিজিনাল উইন্ডোজের সাথে একটি বিল্ট ইন অ্যান্টিভাইরাস থাকে ‘উইন্ডোজ ডিফেন্ডার’ তাই এখন আপনার সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি কি ফ্রি এন্টিভাইরাস ব্যাবহার করবেন নাকি পেইড এন্টিভাইরাস ব্যাবহার করবেন? আর পেইড অ্যান্টিভাইরাস ব্যাবহার করলে কি সুবিধা পাওয়া যাবে।
যারা মনে করেন, আপনার কখনোই অ্যান্টিভাইরাসের প্রয়োজনীয়তা নেই, আমি তাদের কেউ দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আপনি যদি উইন্ডোজ ব্যবহারকারী হোন অবশ্যই অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করা প্রয়োজন। লিনাক্স ব্যবহার করলে অ্যান্টিভাইরাস দরকার পড়বে না।
অরিজিনাল উইন্ডোজ এর সাথে অ্যান্টিভাইরাস কেন প্রয়োজনীয়?
আপনি যখন অরিজিনাল উইন্ডোজ ব্যাবহার করবেন তখন আপনার কাছে দুইটি অপশন থাকবে।
১. উইন্ডোজের ডিফল্ট অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করবেন,
২. নাকি পেইড অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করবেন, সাথে স্পেশাল টুলস থাকতে পারে।
আপনি এই পর্যায়ে এসে নিশ্চয় কনফিউজ, তাই না
প্রথমে আলোচনা করে নেওয়া যাক উইন্ডোজ ডিফেন্ডার সম্পর্কে। উইন্ডোজ ডিফেন্ডার একটি অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার , বিশেষ করে এটি উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের সাথেই প্রিলোড হয়ে আসে। কিন্তু আপনি এটাকে কখনোই বেস্ট সেরা সমাধান বলতে পারবেন না। টেকনিক্যালি দিক থেকে দেখতে গেলে, উইন্ডোজ ডিফেন্ডারের একটি অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম হিসেবে রেটিং অনেক কম। অন্যান্য সফটওয়্যারের সাথে তুলনা করতে গিয়ে উইন্ডোজ ডিফেন্ডারের স্কোর একেবারেই লো, এভি-টেস্ট, এভি কমপারেটিভস, থেকে আপনি নিজেই চেক করে দেখুন। ম্যালওয়্যার প্রটেকশন , ফলস পজেটিভ রিপোর্টের ক্ষেত্রেও অন্য অ্যান্টিভাইরাসের চেয়ে ‘উইন্ডোজ ডিফেন্ডার’ পিছিয়ে আছে। উইন্ডোজ ডিফেন্ডারের ইন্টারফেস নতুন ব্যবহারকারীর জন্য ইউজার ফ্রেন্ডলি না। সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন দিক হলো হেলপ ও টেকনিকেল সাপোর্ট। সাধারণত আমাদের দেশে যে কোনো অ্যান্টিভাইরাস সংক্রান্ত সমস্যায় পড়লে সেই এন্টিভাইরাস কোম্পানীর টেকনিক্যাল সাপোর্টের সাথে যোগাযোগ করে সম্পূর্ন ফ্রি সার্ভিস পাওয়া যায়। কিন্তু, ‘উইন্ডোজ ডিফেন্ডার’ এর বাংলাদেশে লোকাল টেকনিক্যাল সাপোর্টটা কে দিবে? সেই বিষয়টা বিক্রেতাদের কাছেও সকল তথ্য নেই কিন্তু সরাসরি মাইক্রোসফটের সাপোর্ট সেন্টারে পাওয়া যেতে পারে।
আপনার যদি বেসিক টাইপের প্রোটেকশনের দরকার হয়, সেক্ষেত্রে উইন্ডোজ ডিফেন্ডার ভালো কাজ করতে পারবে, তবে আপডেটেড রাখতে হবে। কিন্তু আপনি যদি সিকিউরিটি সম্পর্কে অনেক বেশি তৎপর হোন এবং হাই সিকিউরিটি চান , সেই ক্ষেত্রে আপনার পেইড অ্যান্টিভাইরাসের দিকেই নজর দিতে হবে।
এখন আসা যাক, কোন অ্যান্টিভাইরাস আপনার জন্য ভালো হবে?
বর্তমানে বাজারে অনেক ধরনের পেইড অ্যান্টিভাইরাস আছে যারা পরস্পরের সঙ্গে তীব্র প্রতিযেগিতা করছে। এতে তাদের মান আরও ভালো হচ্ছে। সেক্ষেত্রে বাজারের সবচেয়ে বেশি যে ম্যালওয়্যার প্রতিরোধ করতে সক্ষম সেটি বেছে নেওয়া যেতে পারে। করপোরেট ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
(রেফারেন্স:
https://www.tomsguide.com/us/windows-defender,review-2209.html,
https://www.pcmag.com/article2/0,2817,1926596,00.asp,
https://www.pcworld.com/article/3220513/security/windows-defender-review.html)
লেখক: সুফিয়ান আহমেদ, তথ্যপ্রযুক্তি ও বিপণন বিশেষজ্ঞ