পড়াশোনা শেষ করে কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা লাভের জন্য কোনো কোম্পানিতে বা প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট সম্মানীতে কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করাই ইন্টার্নশিপ। একজন শিক্ষার্থী যখন ছাত্র অবস্থায় থাকে তখন সে শুধুই পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। ছাত্রজীবনের পরিসমাপ্তি ঘটিয়েই একজন শিক্ষার্থীকে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে হয়। ছাত্রজীবন আর কর্মজীবন এক নয়। একজন ফ্রেশার সাধারণত, করপোরেট কালচার সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না, এমনকি অনেককে করপোরেট দুনিয়া সম্পর্কে রীতিমতো ভয়ে থাকতেও দেখা যায়। এ জন্যই ইন্টার্নশিপ দরকার। এটি বুঝতে যে, একটি প্রতিষ্ঠানে কীভাবে কাজ করতে হয় এবং তার পঠিত বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানকে কীভাবে কাজে লাগাতে হয়। ইন্টার্নশিপের সবচেয়ে বড় দিক হলো, এটা একজন প্রার্থীকে চাকরিতে প্রবেশের আগেই চাকরির জন্য প্রস্তুত করে তোলে। ইন্টার্নশিপে শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে শেখার সুযোগ পায়, করপোরেট কালচারের সঙ্গে পরিচিত হয়। চাকরিজীবনের দৈনন্দিন কাজ হাতে-কলমে ব্যবহারিক প্রয়োগ শেখে। অথবা একটা অফিসের প্রতিদিনের কাজের ধরন, মিটিং, কীভাবে প্রায়োরিটি সেট করতে হবে বা নিপুণ হাতে যোগাযোগ করতে হবে তার একটা প্রাথমিক ধারণা পায়; যাতে ভবিষ্যতে চাকরি পেতে বা চাকরি করতে গিয়ে প্রাথমিক ধাক্কার শিকার না হন। আর এই ইন্টার্নশিপ অনেক বড় একটা ভূমিকা রাখে ক্যারিয়ারে। তাছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে গেলে সেখানে একটি নেটওয়ার্ক তৈরি হয়, যেটা তাকে কাজ পেতে কিছুটা হলেও সহায়তা করে। এসব কিছু বিবেচনায় একজন ইন্টার্নশিপ করা ফ্রেশার অবশ্যই এগিয়ে থাকে।
ইন্টার্নশিপ কোনো পেশা নয়, তবে তা কর্মজীবনের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি করে। এর মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত পেশা বিষয়ে অভিজ্ঞতা তৈরি হয়। ফলে পরবর্তীতে সে পেশা বা সেক্টরে নিজেকে অধিষ্ঠিত করতে বা মানিয়ে নিতে সুবিধা হয়। পাশাপাশি এই সময়টা পরবর্তীতে ক্যারিয়ার গঠনে দিকনির্দেশনা দেয় এবং এই পেশা ব্যক্তির জন্য কতটা উপযোগী তার ধারণা পাওয়া যায়। সবচেয়ে বড় সুযোগ হচ্ছে ইন্টার্নশিপে ভালো কর্মদক্ষতা দেখাতে পারলে অত্র ক্ষেত্রে স্থায়ীভাবে কাজ করার সুযোগও তৈরি হতে পারে। তাই পেশা হিসেবে গ্রহণ করার আগে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করার বেশকিছু সুবিধা রয়েছে বলা চলে। তবে মাত্র তিন থেকে চার মাস সময়ে নিজেকে কতটুকু বিকশিত করবেন, তার অনেকটাই নির্ভর করে আপনার ওপর।ইন্টার্নশিপ এর কিছু ধাপ নিচে আলোচনা করা হলো-
বিনা মূল্যে ১৬,১০০ জনকে প্রশিক্ষন দেবে আইসিটি বিভাগ, চলছে রেজিষ্ট্রেশন
প্রথম ধাপ
পাঠ্যক্রমে বাধ্যবাধকতা না থাকলেও একজন প্রার্থী স্বেচ্ছায় ইন্টার্নশিপ করতে পারেন। অনেক প্রতিষ্ঠান ইন্টার্নশিপের সুযোগ দিয়ে থাকে। সাধারণত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে সহযোগিতা করে থাকে। ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমেও ইন্টার্নশিপ করা যায়। আবার বিভিন্ন জবসাইটে ইন্টার্ন চেয়ে বিজ্ঞাপন থাকে। সেখানেও আবেদন করে ইন্টার্নশিপ করা যায়। এক্ষেত্রে যতটুকু যার যোগ্যতা আছে, পড়াশোনা চালিয়ে পাশাপাশি কী কাজ করতে চান, কী রকম সময় দিতে পারবে ইত্যাদি তথ্যগুলো উল্লেখ করে দেবেন। এই ক্ষেত্রে চেনাশোনা কারো সঙ্গে কথা বলতে পারেন। নিজের পছন্দমতো যে কোনো ধরনের কাজে যোগ দিতে পারেন। সব ক্ষেত্রেই চাকরির প্রাথমিক ধারণাগুলো তৈরি হয়ে যাবে।
অভিজ্ঞতা অর্জনের সময়
কোনো এক ধরনের ইন্টার্নশিপ করা মানে নিজেকে সেই ফিল্ডেই আটকে দেওয়া একদমই ভাবলে হবে না। মাথায় রাখুন প্রতিটা কাজই পরবর্তী সময়ের জন্য আপনাকে তৈরি করার সুযোগ, নিজেকে দক্ষ করে তোলার পথ। ইন্টার্নশিপকে দেখতে হবে আগেভাগে ভালো চাকরির পথ প্রশস্ত করার সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে। আপনাকে খুব ভালো করে সব বুঝেশুনে দেখতে হবে। আপনার সঙ্গে যেসব সিনিয়র লোকজন কাজ করবেন তাদের থেকে জানার, শেখার চেষ্টা করবেন। যে কোনো কাজেই যান, এই অভিজ্ঞতাগুলো সাহায্যে আসবেই।
রংরুট
অনেক উৎসাহ নিয়ে একই ফিল্ডে দু-তিনটি ইন্টার্নশিপ করে ফেলার পর মনে হলো আপনি আসলে এই কাজ করতে চান না। এতে কোনো সমস্যা নেই। যেখানে মনে হচ্ছে কাজ করতে পারেন, সেই ফিল্ডের কোনো ইন্টার্নশিপের জন্য অ্যাপ্লাই করে দিন। এতদিন কাজের সূত্রে যদি কোনো যোগাযোগ তৈরি হয়ে থাকে সেটি ব্যবহার করুন। নেটে ঘাঁটাঘাঁটি করে খোঁজখবর নিয়ে কোনো কাজে ভলান্টিয়ার করতে পারেন। আগের কাজের অভিজ্ঞতাগুলো কিন্তু মোটেই ফেলার নয়। তার ভিত্তিতেও কিন্তু আপনি বাজিমাত করে দিতে পারেন। যতদিন পড়াশোনা করবেন, তার সঙ্গে ইন্টার্নশিপ করে চাকরির বাজারে নিজের মূল্য বাড়িয়ে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। চাকরির ইন্টারভিউতে যেখানে যেমন প্রয়োজন আপনার বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথাই আপনাকে বাকিদের থেকে এগিয়ে রাখবে। সুতরাং কাজে লাগবে না ভেবে হাতে আসা ভালো কোনো ইন্টার্নশিপ কিন্তু ছেড়ে দেবেন না।
সঠিক পথের সন্ধান
এবারে ধরুন আপনি হয়তো এমন কোনো বিষয় নিয়ে পড়েছেন, যা নিয়ে আপনি সামনে এগোতে চান না। অথচ সেই বিষয়ে নিয়ে ইন্টার্নশিপ করলেন। পরবর্তী সময় অন্য দিকে যেতে চাইলে অসুবিধা হতে পারে। তাই নিজের জীবিকা বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সত্যি এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ চিন্তা। প্রাথমিকভাবে সব ইন্টার্নশিপই খুলে দেবে অনেকগুলো রাস্তা। হয়তো আপনি ঠিক করতে পারেননি কী প্রফেশন বাছতে চান। সে ক্ষেত্রেও ইন্টার্নশিপ আপনাকে দিতে পারে হরেক রকমের বিকল্প পথের সন্ধান।
জেনে নিন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে চলমান ইন্টার্নের সুযোগ সম্পর্কে-
নেসলে
নেসলে বাংলাদেশের মতো একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান। এখানে যে কেউ ইন্টার্ন করতে পারেন। প্রতিবছর ইর্ন্টানশীপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নেসলেতে কাজের সুযোগ পেয়ে থাকেন। এর ফলে শিক্ষার্থীরা নেসলের কর্মপরিচালনা পদ্ধতি, ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন, বিভিন্ন পণ্যের প্রচার ও প্রসার ইত্যাদি বিষয়ে ধারণা লাভ করতে পারবে।
ইন্টার্নের লিংক-
https://tas-nestle.taleo.net/careersection/3/jobdetail.ftl?job=1800031Q&tz=GMT%2B06%3A00
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডাব্লিউএইচও
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডাব্লিউএইচও এর লক্ষ্য হচ্ছে ভবিষ্যতের জন্য লিডারদের গড়ে তোলা যারা জন স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করবে। ডাব্লিউএইচও ব্যাচেলর্স ও মাস্টার্সে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য ইন্টার্নশিপের সুযোগ করে দিয়েছে যার মাধ্যমে তারা ডাব্লিউএইচও -এর প্রযুক্তিগত এবং প্রশাসনিক কাজ গুলো শিখতে পারে।
এই ইন্টার্নশিপের লক্ষ্য হল –
বিভিন্ন একাডেমিক ফিল্ড থেকে শিক্ষার্থীদের এমন কাজে নিয়োজিত করা যা তাদের জ্ঞানকে প্র্যাক্টিকাল কাজে ব্যবহার করতে সাহায্য করবে।
ডাব্লিউএইচও এর কাজের সাথে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেয়া।
অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রোগ্রাম গুলোর সাথে যুক্ত করা হয়। এছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে যেমন; যোগাযোগ, ফাইনেন্স, এইচ আর ইত্যাদিতেও নিয়োজিত করা হয়।
সুযোগ সুবিধাসমূহ
বিভিন্ন জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যায় লিডারদের সাথে কাজ করার সুযোগ।
ডাব্লিউএইচও এর বিভিন্ন প্রোজেক্টে অংশ করার সুযোগ।
কাজ করার মাধ্যমে নিজেদের দক্ষতা বিকাশ এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ।
আবেদনের যোগ্যতা
শিক্ষা – কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা সমমানের প্রতিষ্ঠান থেকে তিন বছরের ব্যাচেলর্স বা সমমানের ডিগ্রি সম্পন্ন এবং বর্তমানে মাস্টার্স বা সমমানের কোঁন ডিগ্রিতে অধ্যায়নরত হতে হবে। (মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পূর্ণ করা ব্যক্তিদের জন্যেও এই ইন্টার্নশিপটি বিবেচনাযোগ্য যদি তারা তাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ হওয়ার ছয় মাসের মধ্য ইন্টার্নশিপটি শেষ করতে পারেন।)
যোগাযোগ করার দক্ষতা।
দলগত ভাবে কাজ করার দক্ষতা।
শেখার আগ্রহ।
কম্পিউটারে কাজ করার দক্ষতা। যেমন – মাইক্রোসফট অফিস, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট ইত্যাদি।
রিসার্চ কাজের অভিজ্ঞতা।
ডাটা এনালাইজিং, স্ট্যাটিস্টিক ইত্যাদি করার অভিজ্ঞতা।
ফিল্ডে কাজ করার অভিজ্ঞতা।
কম্পিউটারের কোন নির্দিষ্ট প্রোগ্রামে দক্ষতা থাকা।
ভাষাগত দক্ষতা – ডাব্লিউএইচও – এর যে কোন একটি অফিসিয়াল ভাষায় (আরবি, চাইনিজ, ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, রাশিয়ান এবং স্প্যানিশ) দক্ষতা থাকতে হবে।
যেসকল স্থানের প্রার্থীদের জন্য প্রযোজ্য: বাংলাদেশ সহ বিশ্বের সকল দেশের জন্য উন্মুক্ত।
http://www.who.int/careers/internships/en/
অারো অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য করতে পারেন –
ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ইয়াং প্রফেশনাল প্রোগ্রাম ২০১৯
ওয়ার্ল্ড ব্যাংক আহ্বান করছে বাংলাদেশসহ অন্যান্য ওয়ার্ল্ড ব্যাংক (World Bank) ভুক্ত দেশসমূহের নাগরিকদের তাদের ইয়াং প্রফেশনাল প্রোগ্রামটির জন্য। উচ্চাকাঙ্খী ও জানার আগ্রহ থাকার পাশাপাশি ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এর টেকনিকাল ও অপারেশনাল বিষয়গুলোতে অনেক বেশি দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারবে এমন তরুণরা এই প্রোগ্রামটিতে অংশগ্রহণ করতে পারবে।
আবেদনের শেষ সময় জুলাই ৩১, ২০১৮।
সুযোগ সুবিধাসমূহ
কমপিটিটিভ স্যালারি (competitive salary)।
স্বাস্থ্য, জীবন ও অন্যান্য বীমার সুবিধা লাভ।
বিভিন্ন অর্থনৈতিক সুবিধা লাভ।
বিস্তারিত জানতে অফিসিয়াল ওয়েবসাইট টি দেখুন।
আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতাঃ
ওয়ার্ল্ড ব্যাংকভুক্ত দেশের নাগরিক হতে হবে।
১৯৮৬ সালের ১ অক্টোবর বা এর আগে জন্মগ্রহণ করেছে এমন হতে হবে।
পি.এইচ.ডি অথবা মাস্টার্স ডিগ্রি এবং এই সংক্রান্ত কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
ইংরেজিতে দক্ষ হতে হবে।
যেসকল স্থানের প্রার্থীদের জন্য প্রযোজ্য: বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত।
আবেদনের লিংক-
বিস্তারিত জানতে অফিসিয়াল ওয়েবসাইট টি দেখুন।
ওয়েবসাইট লিংক-
http://www.worldbank.org/en/about/careers/programs-and-internships/young-professionals-program#a
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ফেলোশিপ প্রোগ্রাম, ২০১৮
বিশ্বব্যাপী দুনীর্তি বিরোধী জনসচেতনতামূলক কর্মকান্ড করে থাকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বা টিআইবি। তাদের সামাজিক কর্মকান্ডগুলোকে আরও বেগবান করতে তারা ফেলোশিপ প্রোগ্রাম শুরু করতে যাচ্ছে ও আহ্বান করছে তরুণ ও বিভিন্ন শ্রেণীর পেশাজীবিদের।
আবেদনের শেষ সময় জুলাই ১৫, ২০১৮।
সুযোগ সুবিধাসমূহ
৭৫,০০০ টাকা থেকে ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত ফেলোশিপ ভাতা লাভের সুযোগ।
ফেলোশিপ ভাতার মাধ্যমে ফিল্ডওয়ার্ক করার সুবিধা লাভ।
বিস্তারিত জানতে অফিসিয়াল ওয়েবসাইট টি দেখুন।
আবেদনের যোগ্যতা:
মাস্টার্স ডিগ্রি থাকতে হবে।
গবেষণার অভিজ্ঞতা।
বিভিন্ন পেশাজীবি নাগরিক যেমন- গবেষক, শিক্ষাবিদ, আইনজীবি, জার্নালিস্ট আবেদন করতে পারবে।
যেসকল স্থানের প্রার্থীদের জন্য প্রযোজ্য: বাংলাদেশ।
আবেদনের লিংক-
https://www.ti-bangladesh.org/beta3/index.php/en/get-involved/fellowship
বিস্তারিত জানতে অফিসিয়াল ওয়েবসাইট টি দেখুন।
https://www.ti-bangladesh.org/beta3/index.php/en/get-involved/fellowship