এবারের ঈদে রেকর্ড পরিমান রেফ্রিজারেটর ও ডিপ ফ্রিজ বিক্রি করেছে দেশীয় ব্র্যান্ড ওয়ালটন। কোরবানির ঈদকে ঘিরে চলতি বছরের জুলাই মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১০০ শতাংশ বেশি ফ্রিজ বিক্রি হয়েছে ওয়ালটনের। ঈদের দুমাসে অর্থাৎ জুলাই ও আগস্ট মাসে বিক্রি হয়েছে প্রায় ৬ লাখ ফ্রিজ। যা গত বছরের তুলনায় ৫০ শতাংশেরও বেশি।
এছাড়াও গত বছরের কোরবানি ঈদে যে পরিমাণ ডিপ ফ্রিজ বিক্রি হয়েছে তার প্রায় দ্বিগুণ বিক্রি হয়েছে এবারের ঈদে। বাংলাদেশের বাজারে কোনো উৎসবকে ঘিরে এতো বিপুল সংখ্যক ফ্রিজ ও ডিপ ফ্রিজ আর কখনো বিক্রি হয় নি।
বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি, ঈদের আগে মানুষের হাতে কাঙ্খিত অর্থের যোগান, ভাদ্র মাসের অসহনীয় গরম, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অতিবৃষ্টি ও বন্যা না হওয়া ইত্যাদি কারণে ঈদে ফ্রিজের বাজার ছিল বেশ চাঙ্গা।
কোরবানি ঈদ ঘিরে জুলাই ও আগস্ট মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত ৫ লাখেরও বেশি ফ্রিজ বিক্রি করেছে ওয়ালটন। গত বছর বিক্রি হয়েছিলো প্রায় পৌনে চার লাখ। চলতি মাস শেষে দেশীয় প্রতিষ্ঠানটির মোট ফ্রিজ বিক্রি ৬ লাখ পার হতে পারে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে কোরবানীর ঈদকে ফ্রিজ বিক্রির প্রধান মৌসুম ধরা হয়; কারণ এ সময়েই সবচেয়ে বেশি ফ্রিজ বিক্রি হয়।
ওয়ালটনের সেলস বিভাগের নির্বাহী পরিচালক এমদাদুল হক সরকার জানান, জুলাই ও আগস্ট মাসে প্রাথমিকভাবে ৪ লাখ ফ্রিজ বিক্রির টার্গেট নেয়া হয়েছিল। এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে রোজার ঈদের পরপরই বাজারে ছাড়া হয়েছিল ১৪৫ মডেলের ফ্রস্ট, নন ফ্রস্ট ও ডিপ ফ্রিজ। এরমধ্যে নতুন এসেছে ৫৩ মডেলের ফ্রিজ। অতি দ্রুত পূরণ হয়ে যায় সেই লক্ষ্যমাত্রাও। টার্গেট পূণঃ নির্ধারণ করা হয় ৫ লাখে। ঈদের কয়েক দিন আগে সেটাও অতিক্রম করে। ঈদের ছুটিতেও ওয়ালটন ফ্রিজ বেশ বিক্রি হয়েছ। তার প্রত্যাশা, মাস শেষে বিক্রি ৬ লাখ পার হতে পারে। উল্লেখ্য, এ বছর ১৭ লাখ ফ্রিজ বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ওয়ালটনের।
ওয়ালটন প্লাজা সেলস অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট বিভাগের চিফ মার্কেটিং অফিসার মোহাম্মদ রায়হান বলেন, এবার ওয়ালটন ফ্রিজের বাম্পার সেল হয়েছে। ঈদ মেগা ডিজিটাল ক্যাম্পেইনে ৫ টি নতুন গাড়ি উপহার দেওয়ায় গ্রাহকদের মধ্যে সাড়া ফেলে। তিনি দাবি করেন, ডিপ এবং নমরমাল অংশ সমান বলে আলাদা করে ডিপ ফ্রিজ কেনার দরকার হয় না, ফলে ওয়ালটন ফ্রিজের চাহিদা ছিলো ব্যাপক। দেশের ফ্রিজ বাজারের ৭০ শতাংশের বেশি মাকের্ট শেয়ার রয়েছে ওয়ালটনের। তার ধারণা, এবার সারা দেশে সব ব্র্যান্ডের মিলিয়ে ২০ থেকে ২২ লাখ ফ্রিজ বিক্রি হবে।
কর্তৃপক্ষ জানায়, গ্রাহক পর্যায়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে টেম্পারড গ্লাস ডোরে তৈরি ওয়ালটনের ফ্রস্ট ফ্রিজ। ৬০ শতাংশের বেশি ফ্রিজ বিক্রি হয়েছে এই মডেলের। এগুলোর দাম ২৪ হাজার ৫’শ টাকা থেকে ৩৭ হাজার ৫’শ টাকা পর্যন্ত। ভাল বিক্রি হয়েছে বিএসটিআই’র ‘ফাইভ স্টার এনার্জি রেটিং’ সনদ প্রাপ্ত ৩ মডেলের ফ্রস্ট ফ্রিজ। এসবের দাম ছিল ২৮ হাজার ৭৫০ টাকা থেকে ২৯ হাজার ৩’শ টাকা পর্যন্ত।
ছোট পরিবার কিম্বা ব্যাচেলরদের মন জয় করে নিয়েছে ৫০ লিটার ও ১০৭ লিটার আয়তনের দুটি নতুন মডেলের ফ্রস্ট ফ্রিজ। গ্রাহকপ্রিয়তা পেয়েছে ওয়ালটনের ৩১ মডেলের নন-ফ্রস্ট ফ্রিজও। এর মধ্যে বেশি বিক্রি হয়েছে ইনভার্টার প্রযুক্তির নতুন মডেলের সাইড বাই সাইড বা পাশাপাশি দুই দরজা’র ৫৬৩ লিটারের রেফ্রিজারেটর, তিন-দরজা বিশিষ্ট ৫৩৬ লিটার ও ৫২৬ লিটারের রেফ্রিজারেটর এবং ফাইভ স্টার সনদ প্রাপ্ত ৪৩০ লিটারের নন-ফ্রস্ট রেফ্রিজারেটর। কোরবানি ঈদকে ঘিরে ডিপ ফ্রিজও বিক্রি হয়েছে প্রচুর। ঈদে বাজারে নতুন মডেলের ১৪৬ লিটারের টেম্পারড গ্লাস ডোরের ডিপ ফ্রিজ গ্রাহক পছন্দের শীর্ষে ছিল।
জানা গেছে, ওয়ালটন ফ্রিজে দেয়া হচ্ছে এক বছরের রিপ্লেসমেন্ট গ্যারান্টি। কম্প্রেসারে রয়েছে দশ বছর পর্যন্ত গ্যারান্টি সুবিধা। আরো আছে ৫ বছরের ফ্রি বিক্রয়োত্তর সেবা। রয়েছে ৩৬ মাস পর্যন্ত সহজ কিস্তি সুবিধা।
স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি ভারত, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, নাইজেরিয়া, উগান্ডা, মধ্য-প্রাচ্য ও আফ্রিকাসহ বিশ্বের ২০টিরও বেশি দেশে ওয়ালটন ফ্রিজ রপ্তানি হচ্ছে। রপ্তানির তালিকায় শিগগীরই যুক্ত হচ্ছে মধ্য-প্রাচ্যের দেশ ইয়েমেন। লেবাননে দ্বিতীয় ধাপে বিপুল পরিমান ফ্রিজ যাচ্ছে। ফ্রিজের পাশাপাশি এর যন্ত্রাংশও রপ্তানি করছে ওয়ালটন।
আন্তর্জাতিক বাজারে ওয়ালটনের বর্তমান লক্ষ্য ইউরোপ ও আমেরিকার বাজার। এরই প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক বিপণন বিভাগের পাশাপাশি গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগকেও ঢেলে সাজানো হয়েছে। নিয়মিত অংশ নেয়া হচ্ছে উন্নত বিশ্বে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায়।
হাই-লাইটসঃ
চলতি বছরের জুলাই মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১০০ শতাংশ বেশি ফ্রিজ বিক্রি।
জুলাই ও আগস্ট মাসে ফ্রিজ বিক্রির পরিমান ৬ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে ।
গত কোরবানি ঈদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেশি ডিপ ফ্রিজ বিক্রি হয়েছে এবার।
৬০ শতাংশের বেশি বিক্রি হয়েছে টেম্পারড গ্লাস ডোর ফ্রিজ।
বর্তমান টার্গেট আমেরিকা ও ইউরোপের বাজার।