বাংলাদেশে হাই-টেক পণ্য উৎপাদন শিল্পে একের পর এক মাইলফলক অর্জন করে চলেছে দেশীয় মাল্টিন্যাশনাল ব্র্যান্ড ওয়ালটন। দেশে ফ্রিজ, টিভি, এসি, স্মার্টফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, র্যাম, কম্প্রেসরের পর এবার এলিভেটর বা লিফটের মতো ভারী প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদন কারখানা করেছে তারা। অন্যদিকে আমেরিকায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে তৈরি স্মার্টফোন রপ্তানি করতে যাচ্ছে ওয়ালটন। দেশটির বাজারে অ্যাপল, সামস্যাং এর মতো খ্যাতনামা গ্লোবাল ব্র্যান্ডের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগযুক্ত ওয়ালটনের তৈরি স্মার্টফোন। রপ্তানি হচ্ছে বিপুল পরিমাণ এয়ার কন্ডিশনার। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর চেয়ে সুখবর আর কি হতে পারে!
ওয়ালটন তথা বাংলাদেশের প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদন শিল্পের এই বিষ্ময়কর অগ্রগতি নিজের চোখে দেখতে একসঙ্গে দুইমন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রী যাচ্ছেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে।
আগামী ১লা মার্চ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মুস্তফা জব্বার এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ পলক যাচ্ছেন ওয়ালটন কারখানায়। ওই দিন তারা ওয়ালটনের নবনির্মিত সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এলিভেটর বা লিফট ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রি উদ্বোধন করবেন। সেইসঙ্গে ওয়ালটনের তৈরি স্মার্টফোন আমেরিকায় রপ্তানি কার্যক্রম শুরুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন। উম্মোচন করবেন ওয়ালটনের তৈরি অল-ইন-ওয়ান পিসি (পারসোনাল কম্পিউটার) এবং নিজস্ব উদ্ভাবিত টিভি অপারেটিং সিস্টেম আরওএস (রেজভি অপারেটিং সিস্টেম)।
বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স শিল্পখাতে ধারাবাহিকভাবে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করায় ওয়ালটনকে মুজিব বর্ষের অভিনন্দন জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, “সরকারের দেয়া প্রণোদনা ও নীতি সহায়তা সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে নিজেদের চেষ্টায় এগিয়ে যাচ্ছে ওয়ালটন। তাদের সাহসী উদ্যোগের সফল বাস্তবায়নে বাংলদেশে এখন ফ্রিজ, টিভি, এসি, স্মার্টফোন থেকে শুরু করে আইটি পণ্য তৈরি হচ্ছে। এসব পণ্যের মাধ্যমে ওয়ালটন শুধু এ দেশের মানুষের ভালোবাসাই অর্জন করতে সক্ষম হয়নি, বরং সেই ভালোবাসা ছড়িয়ে দিচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করছে। অর্জন করছে সুনাম। তারা আজ সসম্মানে উজ্জ্বল।”
অর্থমন্ত্রী আরো জানান, বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক্স, ইলেকট্রিক্যাল ও আইটি পণ্য উৎপাদন কারখানার পাশাপাশি এশিয়ার অষ্টম কম্প্রেসর কারখানা, র্যাম (র্যানডম একসেস মেমোরি) কারখানা স্থাপন করেছে ওয়ালটন। তারা কমপ্লিকেটেড ও চ্যালেঞ্জিং হাই-টেক পণ্যগুলো তৈরি করার চ্যালেঞ্জ নিচ্ছে। দ্রুত বিকাশমান ইলেকট্রনিক্স শিল্পখাতের বিশাল কর্মযজ্ঞ ও প্রচেষ্টা নিজের চোখে দেখার উদ্দেশ্যেই ওয়ালটন কারখানায় যাচ্ছি। আমার বিশ্বাস- ওয়ালটনের হাত ধরে বাংলাদেশ উন্নতির শিখরে যাবে।
আমেরিকায় ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগযুক্ত ওয়ালটনের তৈরি স্মার্টফোন রপ্তানি প্রসঙ্গে ডাক ও ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেন, ওয়ালটন ইলেকট্রনিক্স খাতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ভাবতেও পারিনি- আমাদের দেশে ল্যাপটপ তৈরি হবে, আমরা এখানে র্যামের ডিজাইন ও র্যাম তৈরি করবো, মোবাইল সেট এখানে উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানি করতে পারবো। অথচ এসবই আজ বাংলাদেশে সত্যি হয়েছে। ওয়ালটন তথা বাংলাদেশি একটি প্রতিষ্ঠানের তৈরি করা পণ্য আমেরিকায় যাবে। আমেরিকার মানুষ তা হাতে নিয়ে ব্যবহার করবে। এটা শুধু আমার জন্যই নয়, পুরো বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গর্বের। এখন আমরা সারা দুনিয়াকে বলতে পারবো- এই দেখো আমরা এসব করতে পারি। তার মতে, আমেরিকায় রপ্তানি কার্যক্রম শুরুর ফলে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর বাজারে ওয়ালটনের তৈরি হাই-টেক পণ্য রপ্তানি করা অনেক সহজ হবে।
তিনি জানান, এতদিন তথ্য প্রযুক্তি পণ্য হিসেবে আমারা কেবল সফটওয়্যার ও সেবার কথা ভাবতাম। হার্ডওয়্যারের কথা ভাবিনি কখনো। ওয়ালটন প্রমাণ করলো- বাংলাদেশ কেবল সফটওয়্যার ও সেবা নয়, হার্ডওয়্যারও বানানোর পাশাপাশি রপ্তানিও করতে পারে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী’র মতে, স্মার্টফোন, ল্যাাপটপের মতো প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া হাতে নেয়া সাধারণত কোনো সহজ কাজ নয়। সেজন্য সব প্রতিষ্ঠানের জন্য সরকারি সুবিধা থাকলেও এই সেক্টরে হাত দিতে অনেকেরই ছিলো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব। অথচ সরকারের দেয়া সব সুযোগ সুবিধা কাজে লাগিয়ে ওয়ালটন এমন সব সাহসী উদ্যোগ নিয়েছে যা কিনা সচরাচর কেউ সাহস করতে পারেনি। ওয়ালটনকে অনুসরণ করে অন্যসব প্রতিষ্ঠানেরও এগিয়ে আসা উচিৎ।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ পলক জানান, দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম ইলেকট্রনিক্স পণ্য তৈরির কারখানা এখন বাংলাদেশে। যেটি কিনা ওয়ালটনের। এজন্য আমরা গর্বিত। বাংলাদেশ এখন কোনো ক্ষেত্রেই পিছিয়ে নেই। দেশের চাহিদা পূরণ করে এসি, ফ্রিজ, টিভি, ল্যাপটপসহ অনেক পণ্যই এখন রপ্তানি করছে ওয়ালটন।
দেশে এলিভেটর বা লিফটের মতো আমদানি বিকল্প হাই-টেক পণ্য উৎপাদন কারখানা স্থাপনে ওয়ালটনের উদ্যোগকে স্বাগত জানান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছরই বাড়ছে লিফটের চাহিদা। কিন্তু, এই ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রায় পুরোটাই আমদানিকৃত লিফটের দ্বারা মিটানো হচ্ছে। ওয়ালটন এই ভারি প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদনে এগিয়ে আসায় কমবে এ খাতের আমদানি নির্ভরতা। সাশ্রয় হবে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা। বিকাশ ঘটবে দেশের আরেকটি উদীয়মান শিল্পের। সেইসঙ্গে তৈরি হবে প্রচুর কর্মসংস্থান ও দক্ষ জনশক্তি।
উল্লেখ্য, রপ্তানির জন্য ওয়ালটন পণ্য অর্জন করেছে ব্যুরো অব ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস (বিআইএস), স্ট্যান্ডার্ডস অরগানাইজেশন অব নাইজেরিয়া প্রোডাক্ট কনফরমিটি এ্যাসেসমেন্ট প্রোগ্রাম এর টেস্টিং সার্টিফিকেটসহ ইউরোপের বিভিন্ন মান সনদ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স সার্টিফিকেশন (সিইএস), রেস্ট্রিকশন অব হ্যাজার্ডোজ সাবসটেন্সেস (আরওএইচএস), রেজিস্ট্রেশন, ইভাল্যুয়েশন, অথোরাইজেশন অ্যান্ড রেস্ট্রিকশন অব কেমিক্যালস (আরইএসিএইচ)। এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, জার্মানি তথা ইউরোপসহ বিশ্বের প্রায় ৩৫টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে ওয়ালটন পণ্য।