তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক মাত্র ছয় ঘণ্টার ব্যবধানে খালাতো দুই ভাইকে হারিয়েছেন। গত বুধবার ভাই হারানোর মর্মস্পর্শী ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার (১৮ জুলাই) রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের খালাতো দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয়। তারা হলেন নাটোরের সিংড়া পৌর শহরের চাঁদপুর মহল্লার আলহাজ আব্দুর রহিমের ছেলে আলহাজ আবুল কালাম আজাদ ওরফে নজু (৫০) ও আলহাজ গোলাম কিবরিয়া (৬২)।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সিংড়া বাজারের মেসার্স প্রিয়ন্ত ট্রেডার্সের প্রতিষ্ঠাতা ও চৌগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ আলহাজ আবুল কালাম আজাদ ওরফে নজু বুধবার ভোরে অসুস্থ হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। পরে দুপুর ১২টায় অপর সহোদর বড় ভাই আলহাজ গোলাম কিবরিয়া একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
দুই ভাইয়ের সন্তানদের সান্ত্বনা দেয়ারও কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। বুধবার রাতে ফেসবুকে হৃদয়স্পর্শী স্ট্যাটাসে সেকথা জানিয়েছেন। মাত্র ছয় ঘণ্টার ব্যবধানে দুই ভাইকে হারানোর মর্মস্পর্শী বর্ণনা দিতে গিয়ে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী লিখেছেন, খালাতেই ভাই হলেও তারা আপন ভাইদের চেয়ে কম ছিলেন না। ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনে কিবরিয়া ভাই ছিলেন তার অন্যতম অভিভাবক।
জুনাইদ আহমেদ পলকের ফেসবুক পেজ থেকে স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
একদিনে দুই ভাইয়ের লাশের ভার বইতে হল!
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর থেকে প্রিয়ন্ত, টিটু, মিঠু, কলিনের সাথে সার্বক্ষণিক কথা হচ্ছিল। হাসপাতালের ডিরেক্টর নজু ভাইকে ভর্তি করার সময় থেকেই আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করছিলেন। তারপর কিবরিয়া ভাইকেও নিতে হল একই হাসপাতালে। ভোরবেলা যখন নজু ভাইয়ের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে সিংড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম তখনও কিবরিয়া ভাই ছিলেন সিসিইউ তে। মিঠু সিংড়ায় নজু ভাইয়ের জানাজা, দাফনের প্রস্তুতিতে ব্যাস্ত। টিটু আর কলিন রাজশাহীতে কিবরিয়া ভাইয়ের সাথে। নাটোর পৌঁছানোর আগেই প্রথমে টিটু, একটু পরেই কলিনের ফোনকল- “চাচা, আব্বু নাই!” আমার নিজেরই বাকরুদ্ধ হয়ে আসছিল। ওদেরকে তবু সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা। সিংড়া এসে সরাসরি নজু ভাইয়ের বাড়িতে। প্রিয়ন্তর নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকানো যায় না। বাদ জোহর নজু ভাইয়ের জানাজা সম্পন্ন করলাম। বালুয়াবাসুয়া কবরস্থানে দাফন করা হল নজু ভাইকে। নিজের ছোট ছেলেকে চিরবিদায় জানিয়ে বড় ছেলের লাশের অপেক্ষায় আমার খালা। কিবরিয়া ভাইয়ের এর আগেও স্ট্রোক হয়েছিল। সে যাত্রায় মহান আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় আবার সুস্থ হয়ে ফিরেছিলেন আমাদের মাঝে। এবারে আর রক্ষা হল না। নজু ভাই দিব্যি সুস্থ স্বাভাবিক ছিলেন। কিছু বুঝে উঠার সময়ও দিলেন না। মাত্র ৬ ঘন্টার ব্যবধানে ২ ভাইয়ের লাশ আমার কাধেই ভারী হয়ে গেল। তাদের নিষ্পাপ সন্তানদের কি সান্তনা দিব?
খালাতো ভাই হলেও আমাদের সম্পর্ক আপন ভাইয়ের থেকে কিছু কম ছিল না। ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক জীবনে কিবরিয়া ভাই ছিলেন আমার অন্যতম একজন অভিভাবক। নজু ভাই রাজনৈতিক সহযোদ্ধা। কত স্মৃতি, কত সুখ-দুঃখের ভাগাভাগি। সব স্মৃতি পেছনে ফেলে দুইজনই আজ চিরবিদায় নিলেন।
মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমার ভাইদের জান্নাতবাসী করেন। পরিবারের সবাইকে যেন এই শোক সইবার শক্তি দেন। সবাই কিবরিয়া ভাই এবং নজু ভাইয়ের জন্য দোয়া করবেন।