আগামী পাঁচ বছরে ৫জি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শিল্পে ১.২ ট্রিলিয়ন ডলার আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে জানিয়েছেন হুয়াওয়ের রিজিওনাল প্রেসিডেন্ট জেমস উ। গতকাল বার্সেলোনায় মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস (এমডব্লিউসি)-২০১৯ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানান।
বার্সেলোনায় সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে হুয়াওয়ের সাউথ-ইস্ট এশিয়ার প্রেসিডেন্ট জেমস উ বলেন, ‘সাউথ-ইস্ট এশিয়ার দেশগুলোতে আগামী ৫ বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে গড়ে ৫-৬ শতাংশ হারে এবং এই প্রবৃদ্ধি অর্জনে মূল ভূমিকা পালন করবে ডিজিটাল অর্থনীতি, যা হবে মোট প্রবৃদ্ধির ২০ শতাংশ। এই অঞ্চলের দেশগুলোতে ডিজিটাল অর্থনীতির উন্নয়নের আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আমরা একটি ডিজিটাল ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে অংশীদারদের সাথে কাজ করবো।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, ২০২০ সালের আগে ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং হংকংসহ ১১টি দেশ ও আঞ্চলিক বাজারে ফাইভজি’র ব্যাপক বাণিজ্যিকীকরণ হবে। আর আগামী ৫ বছরে এই অঞ্চলে ফাইভজি ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়াবে ৮০ মিলিয়ন। ফলে তারবিহীন প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল ও বুদ্ধিবৃত্তিক যন্ত্রাংশ সামাজিক উৎপাদনশীলতাকে গড়ে ৪-৮ শতাংশ বাড়াবে।’
হুয়াওয়ের রিজিওনাল প্রেসিডেন্টের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, হুয়াওয়ে ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং সাউথ-ইস্ট এশিয়ার গ্রাহকদের কাছ থেকে ফাইভজি ট্রায়েলের আমন্ত্রণ পেয়েছে।
জেমস উ বলেন, ‘সাউথ-ইস্ট এশিয়ায় ফাইভজি সম্প্রসারণে ২০১৯ সাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ফাইভজি ভেন্ডর হিসেবে হুয়াওয়ে এই অঞ্চলের সব অপারেটরদের ফাইভজি’র স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করবে। গ্রাহকদের সহায়তা করতে এবং চলমান প্রযুক্তি ব্যবহার করে নূন্যতম উপকার পেতে আমরা ফাইভজি, ব্রডব্যান্ড, ক্লাউড, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং স্মার্ট ডিভাইস প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছি।’
প্রসঙ্গত, গত বছর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে চলমান ক্যাম্পেইনের আওতায় চীনের এই প্রযুক্তি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্র দেশগুলোতে হুয়াওয়ের ফাইভজি উন্নয়নের অংশীদার না করার আহ্বান জানিয়েছে এবং জাতীয় ও ব্যবহারকারীর নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে দাবি করে আসছে। যদিও হুয়াওয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এইসব দায়ী অস্বীকার করে দাবি করেছে, তাদের প্রযুক্তি গুপ্তচারবৃত্তিতে ব্যবহার হতে পারে তবে এখনও পর্যন্ত এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ মেলেনি। তবে সম্প্রতি যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, হুয়াওয়ের ফাইভজি যন্ত্রাংশের নিরাপত্তা হুমকি কমানো সম্ভব।
জেমস উ আরো বলেন, ‘সব দেশ রাজনৈতিক ও আদর্শিক ইস্যুতে ফাইভজি সম্প্রসারণ বন্ধ রাখবে না। সাউথ-ইস্ট এশিয়ার সব দেশের সরকার ও জনগণের সাথে গত ২০ বছর কাজ করে আমরা আমাদের সাইবার নিরাপত্তার রেকর্ড প্রমাণ করেছি। ফলে হুয়াওয়েকে বিশ্বাস করা যেতে পারে। আমি নিশ্চিত তাদের বিচার খুবই স্পষ্ট। উদীয়মান বাজার হিসেবে সাউথ-ইস্ট এশিয়ার দেশগুলো সেইসব আইসিটি ভেন্ডরদের সহায়তা করবে, যারা স্থানীয় উন্নয়নে সত্যিকার অর্থে অবদান রেখেছে।’
হুয়াওয়ে গত ১০ বছর ধরে ফাইভজি প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করে যাচ্ছে এবং হুয়াওয়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ফাইভজি প্রযুক্তিতে ১২ থেকৈ ১৮ মাস এগিয়ে।
জেমস উ বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, সবার ভালোর জন্য এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে সবাই উন্মুক্তভাবে প্রতিযোগীতায় অংশ নিতে পারবে। হুয়াওয়ে প্রতিযোগীতাকে স্বাগত জানায় কারণ এর মাধ্যমে ফাইভজি অবকাঠামোতে সবচেয়ে কার্যকর বিনিয়োগ এবং সব দেশের সাধারণ মানুষকে উন্নতমানের সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। আমার পরামর্শ হলো- রাজনীতি নিয়ে না ভেবে ডিজিটাল নিয়ে ভাবুন। সব স্টেকহোল্ডারদের জন্য এটাই সবচেয়ে ভালো উপায়।