ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশের চাহিদা মিটিয়ে ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ খ্যাত পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। অথচ সরকারি কেনাকাটায় উপেক্ষিত থাকছে দেশে তৈরি এসব পণ্য। এজন্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর) সংশোধন জরুরি। সরকারি কেনাকাটায় দেশীয় শিল্পখাতকে অগ্রাধিকার দেয়া এখন সময়ের দাবি। দেশীয় শিল্প সহায়ক নীতিমালা প্রণীত হলেই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ণ ত্বরান্বিত হবে। লাভবান হবে দেশ ও দেশের মানুষ।
মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল, ২০২১) ‘শিল্পায়নে বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড হোম অ্যাপ্লায়েন্স ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিইইএমইএ) জুম অ্যাপে ওই ওয়েবিনারের আয়োজন করে।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন সিপিটিইউ’র মহাপরিচালক ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সোহেলার রহমান চৌধুরী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিইইএমইএ’র মহাসচিব মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম।
ওয়েবিনারে প্যানেল আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রিজ ওনার’স অ্যাসোশিয়েশন-এর সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, মিনিস্টার হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ টিভি ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি এম এ রাজ্জাক খান এবং ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর আবুল বাশার হাওলাদার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন সাংবাদিক মৃদুল ইসলাম।
এর পাশাপাশি সরকারি কেনাকাটা সংক্রান্ত দরপত্রে দেশি-বিদেশি পণ্যে বিভাজন না করে পণ্যের সঠিক মান নির্ধারণ করে সে অনুযায়ী দরপত্র দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, মানসম্মত দেশীয় শিল্প বা ব্র্যান্ডকে অগ্রাধিকার দিয়ে পিপিআর রুলস-এ সংশোধনী আনলে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে ২০২৬ সালের আগেই বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর সম্ভব হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, এটি অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক যে দেশে ইলেকট্রনিক্স খাতে প্রায় ৫ হাজারের মতো প্রতিষ্ঠান যুক্ত আছে। যেখানে প্রায় ১২ লাখ মানুষ সম্পৃক্ত আছেন। সরকার দেশীয় শিল্প বিকাশে সব ধরনের সহায়তা দিয়ে আসছে। আগামি দিনগুলোতেও তাদের সব ধরনের সহায়তা দিতে আমরা প্রস্তুত আছি।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রতিটি দেশ তার স্থানীয় শিল্পসহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন ও অনুসরণ করে থাকে। এটি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। ইলেকট্রনিক্স ও হালকা প্রকৌশল খাতের দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো নিউ ইনোভেটিভ ইকোনমির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। দেশের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের ভবিষ্যত। এই খাত স্থানীয় বাজারে মূল্য সংযোজন, আমদানি বিকল্প শিল্প এবং রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে অবদান রাখছে। তাই শিল্পায়ন ও বাণিজ্য নীতির দিক থেকে এ খাতকে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। যেখানে স্থানীয় শিল্পখাতকে সহায়তা দেয়ার কথা, সেখানে যদি তারা বৈষম্যের শিকার হন, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ খাততে সহায়তা দিলে ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশের যে লক্ষ্য তা অর্জন সহজ হবে।
বুয়েট ভিসি প্রফেসর ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে সম্পর্কিত দেশীয় ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্যগুলোর সব ধরনের নীতিসহায়তা প্রয়োজন বলে মত দেন। এক্ষেত্রে দেশীয় শিল্পের জন্য ট্যাক্স বেনিফিট ও ট্যাক্স হলিডের পাশাপাশি পিপিআর-এ নতুন ধারা সংযোজন দরকার বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, দেশীয় উচ্চ প্রযুক্তির পণ্যের বিকাশের জন্য ইন্ডাস্ট্রি-ইউনিভার্সিটি কোলাবরেশন অপরিহার্য এবং এ খাতে দেশীয় বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করা দরকার।
সিপিটিইউ’র মহাপরিচালক ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সোহেলার রহমান চৌধুরী বলেন, পিপিআর বিধিমালার উদ্দেশ্য দেশি-বিদেশি সব প্রতিষ্ঠানের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা। যাতে তারা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে। কিন্তু অনেক দরদাতাই পিপিআর আইন ভঙ্গ করেন। সেক্ষেত্রে এ নীতিমালার যাতে ব্যত্যয় না হয়, সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে সার্কুলার জারির পরিকল্পনা করছি। তিনি দেশীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে পিপিআর নীতিমালা সংশোধনের মাধ্যমে অগ্রাধিকার দেয়ার আশ্বাস দেন।