“আইসিটি-ক্ষেত্রে পেশাদার মানবসম্পদ তৈরির মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বছরপ্রতি রপ্তানি আয় পাঁচ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। হাই-টেক পার্ক নির্মাণের মাধ্যমে সারা দেশের সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন আইটিনির্ভর কাজকর্ম দ্রুততর সমাধান করা সম্ভব হবে। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও জীবিকার ধারা বদলাবে; যা অর্থনীতিতে সরাসরি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।” বর্তমান সরকার দেশে প্রযুক্তিনির্ভর কর্মসংস্থান নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে দেশের প্রথম ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার’ নাটোরে স্থাপিত হয়েছে। ইতোমধ্যে, উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রশিক্ষণার্থীরা এখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে উপার্জন শুরু করেছে। ভবিষ্যতে নাটোর হবে প্রযুক্তির উত্তরাঞ্চলীয় হাব। আজ নাটোরে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টারের নতুন ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহমেদ পলক প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভবিষ্যত অর্থনীতি হবে ‘মেধানির্ভর’ ও ‘জ্ঞানভিত্তিক’ উল্লেখ করে পলক আরও বলেন, সরকার দেশে প্রযুক্তি খাতে আরও বেশি বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রযুক্তিজ্ঞানে সমৃদ্ধ নতুন প্রজন্মই আগামীর বিশ্বে নেতৃত্ব দেবে। তাদের হাত ধরেই দেশের প্রযুক্তিভিত্তিক কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে। ভবিষ্যতে নাটোরে আইটি সেন্টারটির সম্প্রসারণে ৪৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী পলক মাদক ও জঙ্গিবাদ থেকে প্রশিক্ষণার্থীদের দূরে রেখে নিজের ও দেশের জন্য প্রযুক্তি শিক্ষাকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ-র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সচিব) জনাব হোসনে আরা বেগম এনডিসি বলেন, “এই কর্মসুচির আওতায় ইতোমধ্যে ২১ টি ব্যাচে মোট ৪৮০ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে, প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তারা বিভিন্ন আইটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সার তৈরির উদ্দেশ্যে আগ্রহী শিক্ষিত বেকার তরুণ-তরুণীদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ফ্রিল্যান্সিং/আইটি পেশায় আগ্রহী উদ্যোক্তাদের জন্য ইনকিউবেশন ও প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামোগত সুবিধা দেওয়াই আমাদের কর্মসুচির উদ্দেশ্য ছিলো। এই ভবন নির্মাণ শেষ করার মাধ্যমে আমরা আমাদের উদ্দেশ্য পুরণে সক্ষম হবো। আমরা আইটি খাতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির বিষয়টি বিবেচনা করে দেশের আরোও সাতটি স্থানে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। নাটোরের সিংড়া উপজেলায় আরেকটি আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার ও একটি হাই-টেক পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে।
নাটোরের বড় হরিশপুরে পুরাতন জেলখানা মেরামত ও আধুনিকায়ন করে এতাদিন আইটি উদ্যোক্তাদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ও অবকাঠামোগত সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিষয়ের (গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট, কম্পিউটার হার্ডওয়্যার এন্ড নেটওয়ার্কিং ট্রাবলশুট, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন,কন্ডাকন্টিং ই- কমার্স ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট বেসিক ইত্যাদি) উপর ৪৮০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। প্রায় ৭ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নাটোরে শেখ কামাল ইনকিউবেশন সেন্টারে নতুন ভবনের কাজ সমাপ্ত হলো। পুরাতন জেলখানার ভবনগুলো সংস্কার করে এতো দিন প্রশিক্ষণ প্রদানের কাজ চলছিলো। নতুন ভবন উদ্বোধনের ফলে প্রশিক্ষণার্থীরা এখন থেকে ইনকিউবেশনের সুবিধাও পাবেন।
নাটোরের জেলা প্রশাসক বেগম শাহিনা খাতুন এর সভাপতিত্বে আজকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন- নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সচিব) হোসনে আরা বেগম এনডিসি, পরিচালক (উপসচিব) ফাহমিদা আখতার, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাজেদুর রহমান খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকরামুল হোসেন, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ মর্তুজা আলী বাবলু, দফতর সম্পাদক দিলীপ কুমার দাস প্রমুখ।বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের অন্যান্য কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।