বছরের পর বছর ধরে প্ল্যাটফর্মে থাকা ফোন নাম্বার আর ইমেইল অ্যাড্রেস দিয়ে সার্চ করার সুবিধা কাজে লাগাচ্ছে ‘দুর্বৃত্তরা’, এমন তথ্যের সন্ধান পেয়েছে ফেসবুক। এ কারণে সাইটটি থেকে এই সুবিধা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড মিরর। এই উপায়ে ‘অধিকাংশ’ ব্যবহারকারীর প্রোফাইল থেকে তথ্য সংগ্রহ করা যেত বলে জানিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামাজিক মাধ্যমটি। এ নিয়ে ফেসবুকের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা মাইক শোফার বলেন, “এ কারণে আমরা এই ফিচার বন্ধ করে দিয়েছি।” বাংলাদেশ থেকে কোনো ব্যক্তির প্রোফাইল খুঁজতে করা সব সার্চের মধ্যে সাত শতাংশই ফোন নাম্বার দিয়ে করা হতো বলেও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
ফেসবুকের প্রায় পাঁচ কোটি ব্যবহারকারীর ডেটা ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অপব্যবহার করেছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় কাজ করা ডেটা বিশ্লেষণা প্রতিষ্ঠান কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা, এমন অভিযোগ উঠার পর থেকে সমালোচক, নীতিনির্ধারক আর বিনিয়োগকারীদের চাপের মুখে ছিল প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু পাঁচ কোটি নয়, প্রায় আট কোটি ৭০ লাখ গ্রাহকের তথ্য লন্ডনভিত্তিক কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার হাতে গেছে বলে বৃহস্পতিবার ধারণা প্রকাশ করে ফেসবুক। এ খবর প্রতিষ্ঠানটির উপর থাকা চাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের সেক্রেটারি অফ স্টেট ফর ডিজিটাল, কালচার, মিডিয়া অ্যান্ড স্পোর্টস ম্যাট হ্যানকক বলেন, ফেইসবুক “আমাদের এক মিলিয়নেরও বেশি নাগরিকের ডেটা ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে।” ফেইসবুক এর আগে ব্যবহারকারীদেরকে তাদের অ্যাকাউন্টে ফোন নাম্বার যুক্ত করতে উৎসাহিত করত। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, এর মাধ্যমে বন্ধুদের সঙ্গে যুক্ত হওয়া আর অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা বাড়ানোর পথ আরও সহজ হয়। প্রোফাইলে ফোন নাম্বার দেখানো হবে কিনা তা ব্যবহারকারীরা ঠিক করে দিতে পারেন, কিন্তু ডিফল্ট ব্যবস্থা হচ্ছে, যে কেউ কারও ফোন নাম্বার দিয়ে সার্চ করে তার প্রোফাইল বের করতে পারে।
ফোন নাম্বার দিয়ে প্রোফাইল দেখানো বা না দেখানোর ক্ষেত্রে ব্যবহারকারী পুরোপুরি নিজের ইচ্ছামতো বাছাই করতে পারতেন তাও নয়। এই সুবিধা শুধু নিজের বন্ধুদের জন্যই করে রাখতে পারতেন তারা। এই ফিচার কীভাবে একজন প্রতারক অপব্যবহার করতে পারেন তা নিয়ে এর আগে বলেছেন বিভিন্ন নিরাপত্তা গবেষক, বলা হয়েছে বিবিসি’র প্রতিবেদনে। ফোন নাম্বার আর ব্যবহারকারীর প্রোফাইল থেকে পাওয়া ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে একজন প্রতারক আক্রান্ত ব্যক্তিকে ফোন করে তাদেরকে নাম ধরে ডাকতে পারেন। এমন ফোন দিয়ে প্রতারক নিজেকে ব্যাংক বা অন্য কোনো সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবেও দাবি করতে পারেন। পেন টেস্ট পার্টনারস-এর নিরাপত্তা গবেষক কেন মুনরো বলেন, “আপনি যদি কারও সঙ্গে প্রতারণা করতে চান, আপনার কাছে তার বিস্তারিত তথ্য আর তাদের নাম জানতে একটি পথ রয়েছে– প্রতারণার জন্য এটি একটি চমৎকার ব্যবস্থা।” এ দিকে ফেসবুক বলেছে, বন্ধুদের খুঁজে পেতে এই ফিচার একটি ‘দরকারি’ সুবিধা, বিশেষত যেসব দেশে একই নামে অনেক ব্যক্তি রয়েছেন। এমন দেশের উদাহরণে টেনে আনা হয় বাংলাদেশের কথা।
ফোন নাম্বার দিয়ে ফেসবুকে সার্চ বাতিল, বাংলাদেশিরা কি বিপদে পড়বেন দেখুন
previous post