ফ্রেন্ডশিপের আইসিটি-সমর্থ বিদ্যালয়গুলো এবছর অনুষ্ঠিত জেএসসি পরীক্ষায় ঈর্ষনীয় সফলতা লাভ করেছে। এ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয় এক বিশেষ সংবাদ সম্মেলন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। বিশেষ অতিথি ছিলেন অধ্যাপক সৈয়দা তাহমিনা আক্তার, পরিচালক, ঢাকা ইনস্টিটিউট অব অ্যাডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
‘ফ্রেন্ডশিপ’ প্রত্যন্ত চর এলাকায় ৭ টি আইসিটি-সমর্থ মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা করে। এই অনুষ্ঠান ছিল সেই স্কুলগুলোর জন্য স্বীকৃতি এবং উৎসবের আয়োজন। এবারের জেএসসি পরীক্ষায় এই ৭টি স্কুলের পাসের হার শুধু শতভাগ নয়, ৯৮.২% শিক্ষার্থী এ বা এ- অর্জন করেছে। যা এই শিক্ষার্থীদের জন্য অভাবনীয়।
দক্ষ শিক্ষকের অভাব, বিদ্যুৎ বা মোবাইল নেটওয়ার্ক কভারেজের অনুপস্থিতি এবং ভৌগোলিক দূরত্বের কারনে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয় পাস করা অধিকাংশ শিক্ষার্থী তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেনা। এই বাস্তবতায় ২০১৪ সালে ফ্রেন্ডশিপ একটি শিক্ষা পদ্ধতি ডিজাইন করে যা মূলত আইসিটি সমর্থ। যার মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রত্যন্ত দূরবর্তী অঞ্চলের মানুষগুলোর জন্য মানসম্মত শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
পরবর্তীতে এই বিদ্যালয়ের সফলতায় অণুপ্রানিত হয়ে, ২০১৫ সালে ফ্রেন্ডশিপ পাইলট প্রকল্প হিসাবে মাধ্যমিক বিদ্যালয় চালু করে একই পদ্ধতিতে। সৌর প্যানেল সমর্থিত এই স্কুলগুলোর প্রতিটি ক্লাসরুমে থাকে একটি কম্পিউটার এবং দুটি মনিটর স্ক্রিন। এছাড়াও থাকে রেকর্ডকৃত ক্লাস। রাজধানীতে সেরা স্কুল থেকে নির্বাচিত শিক্ষকদের সহায়তায় ঢাকায় ফ্রেন্ডশিপের রেকর্ডিং স্টডিওতে ক্লাসগুলো রেকর্ড করা হয়।
২০১৭ সালে, ফ্রেন্ডশিপ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলির শতকরা ১০০ ভাগ ছাত্র পাস করেছে। মোট ৫৬ জন জেএসসি পাস করে, যাদের ভেতর ৯৮.২% শিক্ষার্থী এ বা এ- পায়। যেখানে এবছর জাতীয় পাসের হার মাত্র ৮৩%। এছাড়াও পিইসি পরীক্ষাতেও ফ্রেন্ডশিপ স্কুলগুলোর পাসের হার শতভাগ এবং এখানে জাতীয় পাসের হার ৯৫.১৮%।
ফ্রেন্ডশিপের প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী পরিচালক রুনা খান বলেন, আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থীরা এতো ভাল ফলাফল করেছে। যে চরের ভেতর যেতেই ৫/৬ ঘন্টা লাগছে নৌকায়। কে যাবে সেখানে পড়াতে! বাচ্চাদের জন্য স্কুল না হয় বানালাম, কিন্তু শিক্ষক কই পাবো? তারপরও প্রথমে প্রাথমিক বিদ্যালয় করলাম। পরে দেখলাম প্রাইমারি শেষ করে এরা করবে টা কি? শিশু বিবাহ বেড়ে গেল। আইডিয়া আসলো সেকেন্ডারি স্কুল করার। কিন্তু করলেই তো আর হবেনা। এটা টেকসই করার মত অবস্থা লাগবে। তখন অনেক ভেবে এই ডিজিটাল মডেলটা বের করেছি।
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘‘দূর্গম চরাঞ্চলে শিক্ষাব্যবস্থা পৌছে দেবার জন্য তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করেছে ফ্রেন্ডশিপ। পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে একটা নতুন মাত্রা দিয়েছে। আমি বলব ভবিষ্যতের শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে একটা মাইলফলক তৈরি করেছে ফ্রেন্ডশিপ।’’
মন্ত্রী আরও বলেন, আমরা নতুন একটি একাডেমি তৈরি করেছি আইসিটি মন্ত্রনালয়ে ইনোভেশন ডিজাইন অ্যান্ড এন্টারপ্রেইনর নামে। সেখান থেকে আমরা এম হেলথ এবং ফ্রেন্ডশিপ এডুকেশন এই দুটিকে সরাসরি সহযোগিতা করব। পাশাপাশি ফ্রেন্ডশিপের এই ৭টি ডিজিটাল স্কুলে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব থেকে প্রতিষ্ঠা করব।
বর্তমানে ফ্রেন্ডশিপের ৭৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪,৬৮৬ জন শিক্ষার্থী আছে। মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি আছে ২৪৪ জন শিক্ষার্থী। এই বছর, পিইসি-তে উন্নীতের সংখ্যা গত বছরের ৩৭৫ জন থেকে বেড়ে ৫৪৩ জন হয়েছে। যার মধ্যে গাইবান্ধা থেকে ২৬০, কুড়িগ্রাম থেকে ১২৬ এবং চিলমারী থেকে ১৫৭ জন।