বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ব্যবহারের জন্য প্রথমবারের মতো চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ কমিউনিকেশনস্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল)। আর এই সমঝোতা অনুয়ায়ী বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ৩৫ হাজারের বেশি দেশি-বিদেশি জাহাজকে উপগ্রহ সেবা দেবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। যেখান থেকে বছরে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের আয় হবে ৪২ কোটি টাকা।
রোববার নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সমঝোতা চুক্তি বা এমওইউয়ে স্বাক্ষর করেন বিসিএসসিএলের এমডি সাইফুল ইসলাম এবং নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুস সামাদ। এ সময় ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, টেলিযোগাযোগ সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদারসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এই চুক্তির আওতায় স্যাটেলাইটের একটি ট্রান্সপন্ডার ব্যবহার করবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে বিসিএসসিএল সেবা দিতে শুরু করতে পারে বলে জানা গেছে। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরীণ নদী ও সমুদ্র পথে চলমান জাহাজগুলোতে উচ্চগতির টেলিযোগাযোগ সেবা না থাকায় সেখানে টেলিফোন, ইন্টারনেট, টেলিভিশন ও টেলিযোগাযোগের অন্যান্য সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। এই সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে বিসিএসসিএল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থার অধীনে বন্দর, ফেরি-ঘাট, জাহাজ ও অন্যান্য স্থাপনায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সেবা দেবে।
ফলে বাংলাদেশের সমুদ্র ও স্থানীয় নদী চ্যানেলগুলোতে থাকা জাহাজগুলো স্থলভাগের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ, দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবাগ্রহণ ও টেলিভিশন দেখা যাবে। ফলে নৌযানের নিরাপত্তা, অত্যাধুনিক এবং নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি টেলিযোগাযোগের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলেও জানানো হয়। জাহাজে অবস্থানরত নাবিক ও যাত্রীরা সার্বক্ষণিক টেলিযোগাযোগের সুবিধা ভোগ করতে পারবে। এছাড়াও বিভিন্ন নৌবন্দর ও বাতিঘরেও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ সেবা দেয়া হবে।
বিসিএসসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, বিসিএসসিএল স্থানীয় এবং বিদেশি জাহাজে কম খরচে উপগ্রহ সেবা প্রদান করবে। এর ফলে জাহাজগুলো নিরাপদ নৌযান সুবিধা পাবে এবং সেগুলোতে লাইভ টেলিভিশন সম্প্রচারের সুবিধাও পাওয়া যাবে। বর্তমানে এসব জাহাজের সঙ্গে ওয়্যারলেসে যোগাযোগ করা হয়। এতে প্রায়ই যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটে। স্যাটেলাইট সেবার পর জাহাজগুলো ২৪ ঘণ্টা স্থলভাগের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবে।
এদিকে আগামী সেপ্টেম্বরে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানা গেছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এ মোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। এর মধ্যে ২৬টি কেইউ-ব্যান্ড ও ১৪টি সি-ব্যান্ডের। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর ইন অরবিট টেস্ট (আইওটি) সফলভাবে শেষ হয়েছে এবং বর্তমানে এর নেটওয়ার্ক অ্যাকসেপটেন্স রিভিউ (এনএআর) চলছে। আগামী সেপ্টেম্বরে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ সেবা দিতে পুরোপুরি প্রস্তুত হবে বলে বিসিএসসিএল থেকে জানা গেছে। গত ১২ মে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সফল উৎক্ষেপণ হয়। ২৩ মে স্যাটেলাইটটি এর জন্য নির্দিষ্ট জিওস্টেশনারি স্লট ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব অবস্থানে পৌঁছায়।
বিসিএসসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট থেকে ১৬০০ মেগাহার্জ ব্যান্ডউইথ পেয়েছে দেশ। ইতিমধ্যে তারা স্যাটেলাইট থেকে সেবা নিতে ৪৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে চিঠি দিয়েছেন। এর মধ্যে কিছু কিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে তারা কিছু প্রস্তাবও পেয়েছে।