দক্ষিণ এশিয়ার বাকি সব দেশকে পিছনে ফেলে বাংলাদেশ তার উন্নয়ন-যাত্রা অব্যাহত রেখেছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি, ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স (আইডিআই) ও অন্যান্য মানব সূচকে এগিয়েছে দেশটি। সবকিছুর পেছনে সামগ্রিকভাবে অবদান রয়েছে সরকারের ডিজিটাল সার্ভিসগুলো ও এর বিস্তৃতির।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে লেখা এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানান সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ (পলক)। তার মতে, গত এক দশক ধরে বর্তমান সরকার দারিদ্র্যের হার কমাতে ও গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়েছে।
সেইসঙ্গে, প্রযুক্তিগুলো যাতে ব্যবহার উপযোগী হয় সেদিকেও দৃষ্টি ছিল সরকারের। তাই প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত নবীন-তরুণরা, স্বল্প পরিচিত মধ্যবয়স্করা ও অপেক্ষাকৃত বয়স্ক যারা নতুন পৃথিবীর সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না, তিন শ্রেণির উপযোগী করেই ডিজিটাল সার্ভিস দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে ২০২১ সালকে সামনে রেখে নেওয়া হয়েছে এসব পরিকল্পনা। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ভাবনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কিছু লক্ষ্যকে সামনে রেখে দেশ পরিচালনা করছেন। এগুলো হলো, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার এর সুরক্ষা, স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, সরকারি সেবায় প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার, সাধারণ মানুষের জীবন-মান উন্নয়ন।
এরই ধারাবাহিকতায়, ২০২৩ সালের মধ্যে সকল সরকারি পোর্টালে ডিজিটাল নাগরিক সুবিধা বিষয়ে তৎপর রয়েছে সরকার। ২০১৪ সালে জাতীয় পোর্টালের বিস্তার ঘটানো হয়। যেখানে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ৪৫ হাজার ওয়েবসাইট সন্নিবেশিত আছে। মাসে ৬ কোটি ব্যবহারকারী ওয়েবসাইটটি পরিদর্শন করেন। এছাড়া সারা-দেশজুড়ে স্থাপিত হয়েছে ৫ হাজার ডিজিটাল সেবাকেন্দ্র।
জাতীয় পরিচয়পত্র-স্মার্ট কার্ড, বায়োমেট্রিক ডাটাবেজ ও আইরিশ স্ক্যান নাগরিকসেবায় ভূমিকা রাখছে। নকল ও ফেক আইডি থেকে দূরে থাকা সম্ভব হচ্ছে। বিদেশগমন সহজ ও নিখুঁত করতে চালু হয়েছে ই-পাসপোর্ট। এছাড়া ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ প্রধানমন্ত্রীর একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। আধুনিক শহরের যাবতীয় সুবিধা যাতে গ্রামেই পাওয়া যায় সে জন্যই এই উদ্যোগ।
ডিজিটাল দ্বীপের ভাবনা থেকে গড়ে তোলা হচ্ছে মহেশখালীকে। যেটি দেশের প্রথম ডিজিটাল দ্বীপ। ১৪ মাইল বিস্তৃত অপটিক ক্যাবল দিয়ে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে দ্বীপটিকে । সেখানে তৈরি করা হয়েছে ই-কমার্স সেন্টার যাতে কারিগররা নিজেদের পণ্য সহজে বিক্রি করতে পারেন। মহেশখালীতে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সমুদ্র বন্দরও নির্মাণ করা হবে।
আরও দ্রুত ও উপযোগী ইন্টারনেটসেবা পৌঁছে দিতে বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে চালু করতে যাচ্ছে ৫জি ইন্টারনেটসেবা। সরকারের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হচ্ছে মোবাইলে আর্থিক লেনদেন সহজ করা। এতে করে ব্যাংকিং খাতের বাইরে আর্থিক লেনদেনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতি গতিশীল করতে মোবাইল ব্যাংকিং গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে টেলিমেডিসিন, বিভিন্ন মেডিকেল স্টার্ট আপের আইডিয়া নিয়ে আসছে তরুণরা। প্রযুক্তির মাধ্যমে সহজ করা হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ। বেকারত্ব দূর করতে ও আইটিখাতে কর্মসংস্থান বাড়াতে বাংলাদেশ সরকার ১০০টি স্পেশাল ইকোনমিক জোন এবং ২৮টি আইটি পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার তথ্য-যোগাযোগ ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে গত এক দশকে বাংলাদেশ প্রভূত উন্নতি লাভ করেছে। শতকরা ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হারে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের অগ্রসরমান অর্থনীতিগুলোর একটি। ২০১৮ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ইক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সে বাংলাদেশ ২৪তম স্থান অর্জন করে। আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ বিশ্বের ২৪তম বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তিতে রূপান্তরিত হবে। যার পেছনে রয়েছে প্রযুক্তি-ক্ষেত্রের অবদান।