সারাবিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্রমেই বেড়ে চলেছে দেশে ই-কমার্স খাতের জনপ্রিয়তা। ই-কমার্স খাতের প্রসারের ফলে দেশের প্রান্তিক অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষও এখন ঘরে বসে মোবাইলে কয়েক ট্যাপের মাধ্যমে দেশের অন্য প্রান্তের পণ্য হাতে পেয়ে যাচ্ছেন কম সময়ের মধ্যে। সহজ ও বিশ্বাসযোগ্য হওয়ার কারণে নিত্য প্রয়োজনীয় মুদি পণ্য থেকে সৌখিন পণ্য, যেকোনও কেনাকাটায় মানুষ হয়ে পড়েছে অনলাইননির্ভর। দারাজ এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
কেনাকাটার ক্ষেত্রে মানুষের এই অনলাইন নির্ভরতার প্রমাণ মেলে দেশের গত কয়েক বছরের ই-কমার্স খাতের প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যানে। বাংলাদেশে ই-কমার্স খাতের যাত্রা ১০-১১ বছরের হলেও ই-কমার্স খাত গতি পেতে শুরু করে ২০১৩ সাল থেকে। তবে, এই খাতের সবচেয়ে বেশি প্রসার ও প্রচার ঘটে ২০২০ সালে। গত বছর দেশে করোনার বৈশ্বিক মহামারি আঘাত হানার পর বন্দি মানুষের জীবনে আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেয় ই-কমার্স।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর অনলাইনে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের কেনাবেচা বাড়ে ৩০০ শতাংশ। করোনা প্রাদুর্ভাবের পূর্বে ই-কমার্সের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি যেখানে ছিল ২০-২৫ শতাংশ, সেখানে গত বছর এই খাতের ব্যবসা ৭০ থেকে ৮০ শতাংশতে এসে দাঁড়ায়। ২০২০ সালে ই-কমার্স খাতে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।
তবে, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী করে তুলতে বিনিয়োগবান্ধব নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। সম্ভাবনাময় এই খাতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত নীতিমালা সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী, ডিজিটাল কমার্স খাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শতভাগ মালিকানায় ব্যবসা করতে পারবেন। এর ফলে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি ই-কমার্স খাতের প্রসার ঘটবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
ওয়ার্ল্ড ইনভেস্টমেন্ট রিপোর্ট (ডব্লিউআইআর) ২০২১ অনুযায়ী, বৈশ্বিক মহামারির কারণে সারা বিশ্বের মতো দেশেও বৈদেশিক বিনিয়োগ হ্রাস পেয়েছে। ২০২০ সালে দেশে প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ১১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২.৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে, যা ২০১৯ সালে ছিল ২.৮৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তবে, চলতি বছরের শেষে এটি বাড়ার সম্ভাবনার কথাও এই প্রতিবেদনে বলা হয়। বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় নিয়ে জটিলতা, দেশের অস্থিতিশীল কর নীতি ও কর আরোপে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাবকে ব্যবসার প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত করেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা।
উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পথে থাকা বাংলাদেশে ডিজিটাল ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে বৈদেশিক বিনিয়োগ। ডিজিটাল বাণিজ্য বা ই-কমার্সের যখন জয়জয়কার, তখন এই খাতে বিনিয়োগের জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার কৌশল গ্রহণ করা যেতে পারে।
ইতোমধ্যে, আমরা দেখছি যে বিভিন্ন বিদেশি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান দেশের স্টার্ট-আপের সাথে যুক্ত হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করছে। এটি অদূর ভবিষ্যতে দেশের ই-কমার্স খাতের রূপ সম্পূর্ণ বদলে দিতে পারবে। চীনা প্রতিষ্ঠান আলিবাবা গ্রুপ ২০১৮ সালে দেশের শীর্ষস্থানীয় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম দারাজকে অধিগ্রহণ করার পর দেশের ই-কমার্স খাতে তৈরি হয় বিপুল সম্ভাবনা। কয়েক মাস আগে দারাজ অধিগ্রহণ করে দেশের প্রথম খাবার ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান হাংরিনাকি’কে।
প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি উৎপাদনশীলতা ও জ্ঞান বিনিময়ের সুযোগ তৈরি হয়। কোনও দেশি প্রতিষ্ঠান বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করলে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতালব্ধ কৌশলের মাধ্যমে আরও বেশি লাভবান হওয়া এবং গ্রাহকদের উন্নত সেবা প্রদান করা সম্ভব। আর দেশে ব্যবসার প্রসার ঘটলে সেখানে অধিক মানুষের কর্মসংস্থানও তৈরি হয়। আলিবাবার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা, বিনিয়োগ ও অবকাঠামোগত সহায়তাকে কাজে লাগিয়ে দারাজ ইতিমধ্যে দেশের ৬৪ জেলায় সফলতার সঙ্গে কাজ করছে এবং ৭০ শতাংশ অর্ডার নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেলিভারি করছে। দারাজের এই সম্প্রসারণের ফলে দেশের অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা দারাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তাদের ব্যবসার প্রসার ঘটাতে সক্ষম হয়েছে।
করোনার বৈশ্বিক মহামারির শুরু থেকেই দারাজের কর্মীরা নিরলসভাবে মানুষের সেবায় কাজ করে যাচ্ছে এবং গ্রাহকদের প্রত্যাশা পূরণে সফল হয়েছে। দারাজ সম্প্রতি গ্রাহকদের কাছে আন্তর্জাতিক পণ্য পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগও গ্রহণ করেছে। এভাবে, বিদেশি সহায়তার মাধ্যমে দেশের ই-কমার্স খাত এগিয়ে যাবে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রত্যয় বাস্তবায়নে দেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে।