মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জু ভারতকে ভুগিয়েছেন। বাংলাদেশের অবস্থাও নিয়ন্ত্রণে নেই। এবার শ্রীলঙ্কাও মাথাব্যথা হয়ে উঠতে পারে ভারতের।
দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে শ্রীলংকার জনমত আদায়ের নির্বাচনি লড়াইয়ে অবিশ্বাস্য সফলতা অর্জন করেছেন দেশটির নতুন কান্ডারি বামপন্থী রাজনীতিবিদ অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে। অনেকটা চীনঘেঁষা এই রাজনীতিকের নেতৃত্বাধীন জনতা বিমুক্তি পেরামুনার (জেভিপি) দেশটির গুরুত্বপূর্ণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চমক দেখিয়ে জয়ী হয়েছে।
শ্রীলংকায় এখন বামপন্থীদের জয়জয়কার। নতুন প্রেসিডেন্ট এই অনূঢ়া ন্যাশনাল পিপল্স পাওয়ার (এনপিপি) নামের বাম জোটের শীর্ষ নেতা। গতকাল সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) শপথ নেয়ার মধ্যে দিয়ে তিনি দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্রটির প্রধান হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্বভার নেন।
দিশানায়েকে কলম্বোর মসনদে বসার সঙ্গে সঙ্গে প্রভাবশালী আঞ্চলিক শক্তি ভারতের সঙ্গে দ্বীপরাষ্ট্রটির সম্পর্ক কেমন হবে, তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু করেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা। কয়েক দশক আগে থেকেই তার দল এবং তাকে ভারত-বিরোধী ও চীনপন্থী বলেই মনে করা হয়। ফলে তার জয়ে বেকায়দায় পড়েছেন নয়াদিল্লির কূটনীতিকদের একাংশ।
প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর আধিপত্য ধরে রাখার পাশাপাশি চীনের বলয় থেকে এদেরকে দূরে রাখতে ভারতের চিন্তার অন্ত নেই। ভারতবিরোধী মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুর উত্থানের পর বাংলাদেশে ভারতের দীর্ঘ দিনের মিত্র শেখ হাসিনার নেতৃত্বধীন আওয়ামী লীগ সরকারের উৎখাতের ঘটনা ঘটে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বতী সরকার গঠন করা হয়। আন্দোলনের মূল শক্তি শিক্ষার্থীদের অনেকের মনে ভারতের আধিপত্যবাদী আচরণ এবং আওয়ামী লীগের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির প্রতি তীব্র ক্ষোভ রয়েছে।
ভারতবিরোধী যেসব শক্তি এখন বাংলাদেশের নেতৃত্বে রয়েছেন তাদের নিয়ে বিশ্লেষকদের অনেকের ধারণা ঢাকার সঙ্গে ইসলামাবাদের পড়ন্ত সম্পর্ক ফের জোরদার হবে। আর সেই সুযোগ সময়মতো কাজে লাগাতে পারে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠমিত্র চীন। এবার নয়াদিল্লির দুঃচিন্তার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে শ্রীলংকার বামপন্থী প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া কুমারাকে নিয়ে।
দেশটি বামপন্থী দল জেভিপির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রোহানা উইজেভেরা। ১৯৮০-র দশকে ‘ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ’ এবং আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলে দ্বীপরাষ্ট্রের জনগণের কাছে আস্থা অর্জন করেন তিনি। ভারতকে শ্রীলংকার অন্যতম বড় শত্রু বলেও উল্লেখ করেছিলেন জেভিপির প্রতিষ্ঠাতা।
১৯৮৭ সালে ভারতের সঙ্গে বিশেষ একটি চুক্তিতে সই করে শ্রীলংকা। যাতে প্রধান ভূমিকায় ছিলেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী ও দ্বীপরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জেআর জয়বর্ধনের। চুক্তিতে ভারতের অনুসারী তামিলদের বেশ কিছু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধা দেয়া এবং প্রাদেশিক সরকারগুলোকে ক্ষমতাশালী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল লংকান প্রশাসন।
কিন্তু শুরু থেকেই জেভিপির এই নেতা ভারতের এই চুক্তিকে একতরফা উল্লেখ করে এর বিরোধিতা করে। শুধু তা-ই নয়, দেশের ভেতরে সশস্ত্র বিদ্রোহ গড়ে তোলে এই দল। যা দমাতে সেনা নামাতে হয়েছিল শ্রীলংকার সরকারকে। বেশ কয়েক বছর ধরে চলেছিল রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ।
তবে এখন সেই পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে। দিশানায়েকের মুখে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েক বার ভারতের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহত রাখার কথা শোনা যায়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নয়াদিল্লি এসেছিলেন তিনি। ওই সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে বৈঠক করেন দিশানায়েকে।
জয়শঙ্কর ও দোভালের সঙ্গে বৈঠকের পর সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলেছিলেন দিশানায়েকে। সেখানে তিনি বলেন, ‘নয়াদিল্লির সঙ্গে আলোচনার জেরে আমার দলের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নীতিতে বড় ধরনের কোনও বদল আসবে না। তবে ভারতের কাছ থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা আশা করছি।’
বিশেষজ্ঞদের দাবি, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসার পর প্রবল ভারত বিরোধিতার পথে নাও হাঁটতে পারেন শ্রীলংকার নতুন এই প্রেসিডেন্ট। কারণ দ্বীপরাষ্ট্রটির ঋণখেলাপি অবস্থা পুরোপুরি কাটেনি। এই অবস্থায় আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার বা আইএমএফের থেকে নতুন করে ঋণ নিতে হলে ভারতের সহায়তাপূর্ণ আচরণ প্রয়োজন হবে।
তবে দিশানায়েকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় শ্রীলংকায় বসবাসকারী তামিলদের অবস্থার খুব একটা উন্নতি হবে, এমনটা আশা করা অবাস্তব হবে বলেই মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞেরা। এই অঞ্চলে ভারতের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বি চীনের সঙ্গে অনেকগুলো দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করতে পারেন তিনি। যদিও বাহ্যিকভাবে ভারত এবং চীন ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শ্রীলংকা কোনও শক্তির কাছে মাথা নত করবেন না বলেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন দিশানায়েকে।
প্রতিরক্ষাবিষয়ক বিশেষজ্ঞদের অবশ্য দাবি, এ সবই কথার কথা। শ্রীলংকার গুরুত্বপূর্ণ হাম্বানটোটা বন্দর রয়েছে চীনের দখলে। শিগগিরই সেখানে বেজিংয়ের পাঠানো যুদ্ধজাহাজ বা গুপ্তচর জাহাজের আনাগোনা বাড়বে বলেই আশঙ্কা করছেন তারা।
অন্য দিকে ৫৫ বছর বয়সী অনূঢ়া দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরেই দেশটির প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন দীনেশ গুণবর্ধনে। দ্বীপরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী ক্ষমতায় নতুন প্রেসিডেন্ট এলে নিয়ম মেনে এটা করতে হয়। পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
এর আগে ২০১৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাত্র তিন শতাংশ ভোট পেয়েছিল দিশানায়েকের নেতৃত্বাধীন বাম জোট। কিন্তু গত পাঁচ বছরে আমূল বদলেছে পরিস্থিতি। দ্বীপরাষ্ট্রটি প্রবল আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়ায় সেখানকার জনগণ ভিন্নধর্মী পিপলস লিবারেশন ফ্রন্টের ওপর আস্থাশীল হয়ে উঠে বলে মনে করা হচ্ছে।
দুই বছর আগে চরম অর্থনৈতিক সংকট ও ধসের মুখে পড়ে শ্রীলংকা। যার জেরে দেশ জুড়ে শুরু হয় গণবিক্ষোভ। উত্তাল আন্দোলনের মুখে তখনকার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের বাসভবনে ঢুকে পড়ে জনতা। এ সময় দেশ ছেড়ে মালদ্বীপে পালাতে বাধ্য হন তিনি। প্রেসিডেন্টের ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসেও ওই সময় দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন।
রাজাপাকসের ভাই শ্রীলংকা ছাড়ার পর দ্বীপরাষ্ট্রে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। যা পার্লামেন্টের সদস্যেরা ভোটাভুটিতে করা হয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট ছিলেন রনিল বিক্রমাসিংহে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, ক্ষমতায় আসার পর রাজাপাকসের ভাইদের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে গণবিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি ৭৯ বছরের ওই রাজনীতিক।
২০২২ সালের ওই ঘটনার পর চলতি বছরেই প্রথম বার ভোটের সারিতে দাঁড়িয়েছে লংকাবাসীরা। এই নির্বাচনের দিকে কড়া নজর রাখে ভারত ও চীন। আর্থিক সংকট চলাকালে অর্থের জোগান দিয়ে কলম্বোর পাশে দাঁড়িয়েছিল নয়াদিল্লি।
এবারের শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মোট ৩৮ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূল লড়াই ছিল তিন জনের মধ্যে। ভোটযুদ্ধে দিশানায়েকের বিরুদ্ধে তখনকার ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট রনিল ছাড়াও কঠোর প্রতিপক্ষ ছিলেন ৫৭ বছরের সাজিথ প্রেমদাসা। তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের ছেলে।
মালদ্বীপ-ভারত সংকট: গত এপ্রিলে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জুর সরকার মালদ্বীপে থাকা ভারতের সেনার একটি দলকে মালদ্বীপ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছিল। এরপর মে মাসে চীনের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি সই করে মালে।
চলতি বছরের শুরুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেছিলেন মালদ্বীপের দুজন উপমন্ত্রী। ভারতের লাক্ষ্মাদ্বীপে মোদির পর্যটন প্রসারের পরিকল্পনার পরিপ্রেক্ষিতে ওই মন্তব্য করেছিলেন মালদ্বীপের মন্ত্রীরা। এর উত্তরে ভারতের পর্যটকেরা মালদ্বীপ বর্জনের ডাক দেন, যেটি পর্যটননির্ভর মালদ্বীপের জন্য মারাত্মক হুমকি ছিল।
সম্প্রতি মালদ্বীপের ঋণের বোঝা বাড়ছে সেইসঙ্গে রাজস্বের পরিমাণ কম। রিজার্ভও কমে যাওয়ায় বাজেট ঘাটতি আছে। সে কারণে আর্থিক সহায়তা খুঁজছে দেশটি।
দেশটি চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ুক, এটা ভারত চায় না। তাই গত মাসে মালদ্বীপ সফরে গিয়েছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সে সময় মালদ্বীপের সঙ্গে সম্পর্ক ভারতের জন্য একটি অগ্রাধিকার বিষয় বলে তিনি উল্লেখ করেছিলেন।
দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক পি সাহাদেবন বলেন, ‘মুইজ্জুর সরকার তার চীনপন্থী অবস্থান পরিবর্তন না করেও ভারতের প্রতি তার অবস্থান নরম করেছে।’ মালদ্বীপের অর্থনৈতিক সংকট এর একটি কারণ বলে মনে করেন তিনি৷ অভিজ্ঞ কূটনীতিক অনিল ওয়াধওয়া মনে করছেন, মুইজ্জুর আসন্ন সফর তার ‘ইন্ডিয়া আউট’ অবস্থান থেকে সরে আসার একটি সংকেত৷ ‘মালদ্বীপ বুঝতে পেরেছে যে ভারতই একমাত্র দেশ, যেটি মালদ্বীপের সংকটে দ্রুত সাড়া দিতে পারে। আর্থিক সংকটের সময়ে তাকে উদ্ধার করতে পারে।’
শ্রীলংকায় নতুন কান্ডারি : শ্রীলংকার নাগরিকদের আস্থা অর্জন করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন বামপন্থী রাজনীতিক অনূঢ়া কুমারা দিসানায়েকে। মূল প্রতিদ্বন্দ্বী সাজিথ প্রেমাদাসা এবং ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট রণিল বিক্রমাসিংহেকে ধরাশায়ী করে জয়ী হন তিনি।
রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) দ্বিতীয় দফায় ভোট গণনার পর তাকে বিজয়ী ঘোষণা করে দেশটির নির্বাচন কমিশন। এর মধ্য দিয়ে ৫৫ বছর বয়সী দিশানায়েকে দ্বীপরাষ্ট্রটির প্রথম বামপন্থী হিসেবে রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন। ২০২২ সালে গণবিক্ষোভের মুখে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট দেশ ছেড়ে পালানোর দুই বছরেরও বেশি সময় পর নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট পেলো দেশটি। খবর দ্য হিন্দু।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, ৪২ দশমিক ৩১ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন দিসানায়েকে। তার নিকটতম দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধীদল সঙ্গী জন বালাওয়াগার (এসজেবি) নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা পেয়েছেন ৩২ দশমিক ৭৬ শতাংশ ভোট। আর মাত্র ১৭ শতাংশ ভোট পেয়েছেন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট রণিল বিক্রমাসিংহে।
কে এই দিসানায়েকে: রাজনীতিতে অনেকটাই নতুন মুখ দিসানায়েকের উত্থানের গল্প রূপকথার মতো। দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিবিদদের চেয়ে নিজেকে ভিন্নমাত্রায় উপস্থাপন করে জনমত আদায়ে সক্ষম হয়েছেন বামপন্থী এই নেতা। ১৯৬৮ সালে জন্ম নেয়া দিসানায়েকে ছাত্রজীবনেই রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শ্রীলংকার দুর্নীতি ও দুর্বল শাসনের কঠোর সমালোচক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন তিনি।
১৯৯৫ সালে জনতা বিমুক্তি পুরামুনার (জেভিপি) পলিটব্যুরোতে যোগ দেন। পরে ২০০০ সালে প্রথমবারের মতো আইনপ্রণেতা নির্বাচিত হন তিনি। ২০০৪ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত কৃষি, প্রাণিসম্পদ, ভূমি ও সেচ মন্ত্রী এবং ২০১৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত প্রধান বিরোধী হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তরুণ এই নেতা।
২০১৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ১৭তম জাতীয় কনভেনশনে জেভিপির নেতা হিসেবে নির্বাচিত হন দিসানায়েকে। দীর্ঘ এই রাজনৈতিক যাত্রা তাকে শ্রীলংকার রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে।
এবারের নির্বাচনে এনপিপি জোটের প্রার্থী ছিলেন জেভিপি প্রধান অনূঢ়া কুমারা দিসানায়েকে। যদিও জোটটি এর আগে কখনো শ্রীলংকার বিরোধীদলও ছিল না। দেশটির ২২৫ সদস্যের পার্লামেন্টে এই জোটের আসন ছিল মাত্র তিনটি।
কিন্তু গণবিক্ষোভের মুখে গোতাবায়া রাজাপাকসে দেশ ছেড়ে পালানোর পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জেভিপির জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। ওই বিক্ষোভে সক্রিয় ভূমিকা ছিল দলটির। আন্দোলনের পর জেভিপি বৃহত্তর পরিবর্তনের ডাক দেয়। সামাজিক ন্যায়বিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দলটির অনড় অবস্থান নাগরিকদের আকৃষ্ট করেছে। তাতে দলের সঙ্গে বেড়েছে দিসানায়েকের ব্যক্তিগত আবেদনও।
গত শতকের সত্তর ও আশির দশকে মার্ক্সবাদে অনুপ্রাণিত দুটি বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিল জেভিপি। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা এর চরম প্রতিশোধ নেয়। গণগ্রেপ্তার, নির্যাতন, অপহরণ ও গণহত্যায় দল সংশ্লিষ্ট কমপক্ষে ৬০ হাজার মানুষ নিহত হন। এরমধ্যে দলের প্রতিষ্ঠাতা রোহানা উইজেবিরাসহ বেশিরভাগ জ্যেষ্ঠ নেতাও ছিলেন। অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পর ৫৫ বছর বয়সী দিসানায়েকে জেভিপির পলিটব্যুরো সদস্য হন। দলটিও সহিংসতার পথ থেকে সরে আসে। বিশ্লেষকদের মতে, দিসানায়েকে সমাজের বিভিন্ন অংশের মধ্যে এক বৃহত্তর জোট গড়ে তুলতে পেরেছেন। এটিই তাকে জয়ের পথ তৈরি করে দিয়েছে।