আপনি কি হতে পারবেন একজন সফল মুক্তপেশাজীবী বা ফ্রিল্যান্স কর্মী? এই পেশায় যা যা প্রয়োজন সেই গুনগুলো কি আপনার আছে? আসুন, দেখা যাক!
প্রথমেই আমরা এই পেশাটাকে একটা সাধারণ চাকরীর সাথে তুলনা করি। একটা চিরাচরিত চাকরীর বাজারে প্রবেশ করতে হলে আমাদের প্রথমেই যা দরকার তা হল একটা ডিগ্রি – অনার্স বা মাস্টার্স, বা তারচেয়েও বেশি কিছু একটা। আপনার সিভি-তে ২/১টা ডিগ্রি বা সার্টিফিকেট না থাকলে আপনি কোন ইন্টার্ভিউতে ডাক পাবেন না, চাকরী তো দুরের কথা। আপনি যেই কোম্পানিতে চাকরী করতে চান তারা সবার আগে আপনার সিভি-তে আপনার ডিগ্রি দেখবে, আপনার সিজিপিএ দেখবে, আপনি কোন জায়গা থেকে পড়াশোনা করে এসেছেন তা দেখবে।
ফ্রিল্যান্স জগতে ডিগ্রি গুরুত্বপূর্ণ নয়, অন্ততঃ খুব একটা নয়। ইউরোপের কোন একটা দেশে বসা একজন ক্লায়েন্টের কাছে এটা গুরুত্বপূর্ণ নয় যে আপনি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়েছেন, না প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। আপনার সিজিপিএ ৩.৯৯ হলেও তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়, আবার ২.৯৯ হলেও নয়। (হ্যাঁ, কিছু কাজের ক্ষেত্রে হতে পারে। আপনার ক্লায়েন্ট যদি আপনাকে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের থিসিসের কাজে সাহায্য করতে বলে, সে চাইবে যেন আপনি একজন ভালো ছাত্র হন)। কোন কোন ক্ষেত্রে তারা হয়তো আপনার পড়াশোনার বিষয় বা আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড জানতে চাইবে, কিন্তু সেটাও খুব বিরল। আপনার সিজিপিএ কিংবা আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম তারা জানতে চাইবে না। অন্ততঃ আমার সাথে সেটা কখনও হয়নি।
ক্লায়েন্টরা যে ব্যাপারটা বেশি আগ্রহ দেখাবে তা হলো আপনার দক্ষতা। আপনার দক্ষতা দিয়েই আপনি একটা কাজ পাবেন; তাছাড়া আরও আছে আপনার যোগাযোগ করার ক্ষমতা, যাকে আমরা ইংলিশে বলি Communication Skill, এবং আপনার কথাবার্তা। ক্লায়েন্টের কাছে এটা বেশি জরুরী জানা যে আপনি তাদের দেয়া কাজটা করতে পারবেন, এটা না যে আপনার কাছে একটা সার্টিফিকেট আছে যেটা বলছে যে কাজটা আপনি শিখেছেন।
যেমন ধরেন, এমন অনেকেই আছে যারা ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স/মাস্টার্স করেছেন ভালো একটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, এবং ভালো রেসাল্টও করেচে। কিন্তু তারা যতই ভালো ইংলিশ জানুক না কেন, তারা ভালো লিখতে পারেন না। আবার আমি এমন কিছু মানুষকে চিনি, যারা ইংলিশে মাস্টার্স করেও নিজের সাবজেক্টে বেশি কিছু জানে না। তাদের কাছে সার্টিফিকেট আছে ঠিকই, কিন্তু তারা কখনই ভালো লিখতে পারবে না। অন্ততঃ ক্রিয়েটিভ লেখার ক্ষেত্রে তাদের হাতে তেমন কিছু আসবে না। একজন ক্লায়েন্ট, যার কিছু ভালো মানের আর্টিকেল লাগবে, সে কি এই মানুষটাকে কাজ দিবে, যদিও তার একটা ভালো ডিগ্রি আছে।
(এটা শুধু মাত্র একটা উদাহারন ছিলো। আমি বলেছি “অনেকেই” … অর্থাৎ, এটা কিছু মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, সবার ক্ষেত্রে নয় যারা ইংলিশে পড়াশোনা করেছেন।)
কিন্তু এমন কি হতে পারে না যে আপনি পড়াশোনা করেছেন ম্যাথেমেটিক্সে, সমাজবিজ্ঞানে অথবা পদার্থবিজ্ঞানে, কিন্তু আপনি আসলেই খুব ভালো লিখতে পারেন? শুধু লিখতে পারেন তা না, লেখালেখি করাটা আপনার নেশা! অথবা, এর উল্টোটাও তো হতে পারে। আপনি পড়াশোনা করেছেন ইংরেজি সাহিত্যে, কিন্তু আপনার পছন্দ ফটোশপ বা ইলাস্ট্রেটরে কাজ করা। কার্টুন আঁকা, লোগো ডিজাইন করা, ওয়েবসাইট ডিজাইন করা, টেম্পলেট বানানো – এইসব কাজে আপনি যে মজা পান তা একটা ভালো বই পরে পান না। হয়তো আপনি আপনার বাবা-মা’র ইচ্ছায় ইঞ্জিনিয়ারিংপরেছেন, কিন্তু আপনার মন পরে আছে গ্রাফিক ডিজাইনে – তখন?
এইসব ক্ষেত্রে এই আন্তর্জাতিক মার্কেটপ্লেসগুলো খুব কাজে আসতে পারে, কারন এখানে আপনার দক্ষতা আর ইচ্ছা অনুযায়ী আপনি কাজ করতে পারবেন, আপনার ডিগ্রি অনুযায়ী নয়। যে কাজ আপনার পছন্দ এবং যেই কাজে আপনি দক্ষ, সেই কাজই আপনি খুজে পাবেন এই মার্কেটপ্লেসগুলো।
ব্যাপারটাকে আরেকভাবে দেখা যায়। মনে করুন কোন একটা কারনে আপনি আপনার পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। সেটা অনেক কারনেই হতে পারে – অসুস্থতা, পারিবারিক কোন সমস্যা, আর্থিক সমস্যা। মেয়েদের ক্ষেত্রে এটা বেশি হয়; অনেক মেয়েই তাদের পড়াশোনা শেষ করতে পারে না কারন তাদের বিয়ে হয়ে যায়, সন্তানের জন্য, অথবা রক্ষণশীল পরিবারের কারনে। আমাদের দেশে অন্ততঃ একটা অনার্স ডিগ্রি না থাকলে চাকরী পাওয়া প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার। একটা বিকল্প উপায় আছে – ব্যবসা, কিন্তু সেটাও তো সবার জন্য নয়। খুব কম কোম্পানি বাংলাদেশে আছে যারা এমন একজনকে চাকরী দেবে যার একটা অনার্স বা সমমানের ডিগ্রি নেই।
অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে এই সমস্যা নেই। আপনি যদি কাজ পারেন, আপনি যদি সৎ ওপরিশ্রমিহন, আপনি অবশ্যই কাজ পাবেন। এখানে আপনার ডিগ্রি আপনার জন্য অপরিহার্য নয়, একটা এক্সট্রা বোনাস মাত্র। যদি আপনি কাজ পারেন এবং যদি আপনার কাজ ভালো হয়, এটা কোন ব্যাপার না যে আপনি পিএইচডি হোল্ডার না ড্রপআউট!
তবে কি আমি বলছি যে ফ্রিল্যান্স কাজ করতে আপনার পড়াশোনা করার কোন দরকার নেই? আপনি কি আজ থেকেই পড়াশোনা ছেড়ে কাজে লেগে যাবেন? অবশ্যই না! পড়াশোনার কোন বিকল্প নেই। অবশ্যই পড়াশোনা চালিয়ে যাবেন, এবং শেষ করবেন, এবং তারপর যদি অন্য কোন কাজ আপনার করতে ইচ্ছা করে যার সাথে আপনার পড়াশোনার কোন সম্পর্ক নেই, করবেন! অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলো আপনাকে সেই স্বাধীনতা দিচ্ছে, কিন্তু আপনার শিক্ষা আপনার জীবনের একটা খুব দরকারি অংশ।
ধন্যবাদ!
লেখক: অজান্তা রেজওয়ানা
ফ্রিল্যান্স রাইটার, এডিটর অ্যান্ড ট্রান্সক্রাইবার