কৃত্রিম বুদ্ধিমানরা আসছে। ভবিষ্যতে হয়তো তারাই এই পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করবে। মানুষ পুরোমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়বে এর ওপর। সোফিয়া আর স্যামই তো এর উদাহরণ।
প্রথমের শুরু করব সোফিয়ার কথা দিয়ে। দেখতে অর্ডে হেপবার্নের মতো। কোনো প্রশ্ন করলে স্মিত হেসে গুছিয়ে উত্তর দিতে পারে।তবে এখনো পরিপূর্ণ নয় সে। মাথার পেছনে দিকটি চিপ আর যন্ত্রপাতিতে ঠাসা। প্রযুক্তি অঙ্গনে বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত নাম ‘সোফিয়া’। হংকংয়ের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান হ্যানসন রোবোটিকসের তৈরি ‘নারী’ রোবট সোফিয়া।
বড় খবর, এই রোবট ঢাকাতে আসছে। ৬ ডিসেম্বর ঢাকায় শুরু হতে যাওয়া দেশের বৃহত্তম তথ্য-প্রযুক্তি সম্মেলন ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের উদ্বোধনী দিনে সোফিয়া বাংলাদেশ ভ্রমণে আসছে বলে নিশ্চিত করেছে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড উপলক্ষে সোফিয়াকে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টি জানান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ। সোফিয়াকে তৈরি করেছেন প্রযুক্তিবিদ ডেভিড হ্যানসন। সোফিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ আসছেন তিনি। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশেষ সেশনে কথা বলবেন তিনি।
প্রযুক্তিক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোর বর্তমান আগ্রহ এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায়। সম্প্রতি ইউএনডিপি সোফিয়াকে বিশ্বের প্রথম নন-হিউম্যান ইনোভেশন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ঘোষণা করে। এর আগে কোনো রোবট নাগরিকত্ব যেমন পায়নি, এমন উন্নমানের বুদ্ধিমত্তাও কারো মধ্যে সঞ্চার করা যায়নি। গত অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে সৌদি আরব আড়াই বছর বয়সী সোফিয়াকে নাগরিকত্বের মর্যাদা দেয়। সৌদি আরবে সোফিয়াকে নাগরিকত্ব দেওয়ার পর থেকেই আলোচনায় আসে সোফিয়া। পরে এক সাক্ষাৎকারে নিজের পরিবার গঠন ও সন্তান ধারণের ইচ্ছা প্রকাশ করে এ রোবট। সোফিয়ার ভাষ্য,পরিবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। একটি মেয়ে সন্তানের খুব শখ তার। নিজের নামের সঙ্গে মিলিয়ে মেয়ের নাম রাখতে চান তিনি। মেয়ের নামটিও হবে ‘সোফিয়া’।
মূলত মানুষের সঙ্গে কথা-বার্তা চালানোর উদ্দেশ্যে প্রোগ্রাম করা হয়েছে তাকে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন সোফিয়া বিভিন্ন মুখভঙ্গি ফুটিয়ে তোলার পাশাপাশি কৌতুকও করতে পারে। কোনো প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া হলে, ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের সাহায্যে বিশাল তথ্যভাণ্ডার থেকে ‘মেশিন লার্নিং’ পদ্ধতিতে প্রশ্নের জবাব দিতে পারে। ২০১৫ সালের ১৯ এপ্রিল সোফিয়াকে প্রথম সক্রিয় করা হয়। ডেভিড হানসন বলেন, এতে ফেসিয়াল রিকগনিশন ব্যবহার করা হয়েছে। আছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ভিজুয়াল ডেটা প্রসেস করার ক্ষমতা। এটি মানুষের মুখের অঙ্গভঙ্গি নকল করতে ও মুখভঙ্গি দেখাতে পারে। নির্দিষ্ট কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সাধারণ কথোপকথন বিশেষ করে কোনো বিশেষ বিষয়ের ওপর আলোচনা চালাতে পারে।গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের ভয়েস রিকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহৃত হওয়ায় ভবিষ্যতে এর কথোপকথন আরও উন্নত হবে। বাড়িতে বয়স্ক মানুষের সঙ্গী হিসেবে ও ঘরবাড়ি দেখাশোনা করতে, অনুষ্ঠান ও পার্কে মানুষের সাহায্যে কাজে লাগবে সোফিয়া। সামাজিক দক্ষতা মানুষের পর্যায়ে নিয়ে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে সোফিয়া।
কম্পিউটার প্রোগ্রাম এলিজার মতোই কাজ করে সোফিয়া। মানুষের সঙ্গে কথোপকথনের জন্য ওই প্রোগ্রামটি প্রথম তৈরি করা হয়। চ্যাটবটের মতো আগে থেকে প্রোগ্রাম করে রাখা কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে এ প্রোগ্রাম।
এবার আসি স্যামের কথায়। নিউজিল্যান্ডের উদ্যোক্তা নিক গ্যারিটসেনের উদ্ভাবন করেছেন স্যামকে। স্যামের অবশ্য কোনো আকৃতি দেননি তিনি। এক তিনি বলছেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রাজনীতিবিদ। আশা করছেন, তাঁর দেশের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে এটি। ৪৯ বছর বয়সী নিক গেরিটসেনের উদ্ভাবিত ভার্চ্যুয়াল রাজনীতিবিদ স্থানীয় নানা বিষয়সহ গৃহায়ণ, শিক্ষা ও অভিবাসনের মতো ইস্যুগুলো নিয়ে মানুষের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। গেরিটসেন এর নাম দিয়েছেন ‘স্যাম (এসএএম)’। তিনি বলেন, বর্তমানে রাজনীতির চর্চায় মতপার্থক্যের মাত্রা অনেক বেশি। তাই জলবায়ু পরিবর্তন ও সমতার মতো জটিল ইস্যুগুলো বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে সমাধান করা যাচ্ছে না। এ জন্যই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রাজনীতিবিদ উদ্ভাবন করেছেন তিনি।
গেরিটসেন বলেন, ফেসবুক মেসেঞ্জার ও নিজের হোমপেজে চালানো জরিপের মাধ্যমে স্যাম প্রতিনিয়ত শিখছে। মানুষের মধ্যে যে মতপার্থক্য, তা প্রযুক্তির জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ বলে স্বীকার করেন তিনি। এ ছাড়া কারিগরি ত্রুটি তো রয়েছেই। তবে তিনি বিশ্বাস করেন, বিভিন্ন দেশে যে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিভেদ সৃষ্টি হচ্ছে, তাতে সেতুবন্ধ তৈরি করতে সক্ষম হবে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। গেরিটসেন আশা করছেন, ২০২০ সাল নাগাদ তাঁর এই উদ্ভাবন স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবে। ওই বছর নিউজিল্যান্ডে জাতীয় নির্বাচন। সেই নির্বাচনে স্যাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে বলেও তিনি আশাবাদী।